জীবন বিজ্ঞান সমাধান - বিভাগ 'ক'
বিভাগ-‘ক’ (জীবন বিজ্ঞান)
(প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো)
১.১ সূর্যশিশির নামক পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতার কর্ষিকাগুলো পতঙ্গদেহের প্রোটিনের সংস্পর্শে আসামাত্র বেঁকে গিয়ে পতঙ্গদেহকে চেপে ধরে। এটি কি ধরনের চলন?
(a) থার্মোন্যাস্টিক (b) কেমোন্যাস্টিক (c) সিসমোন্যাস্টিক (d) ফোটোন্যাস্টিক
সঠিক উত্তর: (b) কেমোন্যাস্টিক
ব্যাখ্যা: রাসায়নিক পদার্থের (এখানে প্রোটিন) সংস্পর্শে যে ন্যাসটিক চলন হয়, তাকে কেমোন্যাস্টিক বা রসায়নব্যাপ্তি চলন বলে।
১.২ উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে যে হরমোন –
(a) অক্সিন (b) জিব্বেরেলিন (c) কাইনিন (d) ইথিলিন
সঠিক উত্তর: (b) জিব্বেরেলিন
ব্যাখ্যা: জিব্বেরেলিন হরমোন উদ্ভিদের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে এবং কোনো কোনো উদ্ভিদে (যেমন- গাজর, বিট) ফুল ফোটাতে সাহায্য করে (বোল্টিং)।
১.৩ তারারন্ধ্রর সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণকারী অংশটি –
(a) রেটিনা (b) আইরিশ (c) কর্নিয়া (d) কোরয়েড
সঠিক উত্তর: (b) আইরিশ
ব্যাখ্যা: আইরিশ বা কণীনিকা তারারন্ধ্রের ব্যাস কমিয়ে বা বাড়িয়ে চোখে প্রবিষ্ট আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
১.৪ সঠিক জোড়টি নির্বাচন করো :
(a) বায়ুপরাগী—পলাশ (b) জলপরাগী—আম (c) পতঙ্গপরাগী—সূর্যমুখী (d) পক্ষীপরাগী—গম
সঠিক উত্তর: (c) পতঙ্গপরাগী—সূর্যমুখী
ব্যাখ্যা: সূর্যমুখী ফুলের পরাগযোগ কীটপতঙ্গের (যেমন মৌমাছি) সাহায্যে ঘটে। বাকি জোড়গুলো ভুল (পলাশ-পক্ষী, আম-পতঙ্গ, গম-বায়ু)।
১.৫ মাইটোসিস কোশ বিভাজনের যে দশায় সিস্টার-ক্রোমাটিডদ্বয়কে আলাদা হতে দেখা যায় –
(a) প্রোফেজ (b) মেটাফেজ (c) অ্যানাফেজ (d) টেলোফেজ
সঠিক উত্তর: (c) অ্যানাফেজ
ব্যাখ্যা: অ্যানাফেজ দশায় সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয় এবং সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুর দিকে গমন করে।
১.৬ জননাঙ্গ ও জননগ্রন্থির পরিপূর্ণতা ঘটে মানব পরিস্ফুরণের যে দশায় –
(a) শৈশব (b) বয়ঃসন্ধি (c) সদ্যজাত (d) বার্ধক্য
সঠিক উত্তর: (b) বয়ঃসন্ধি
ব্যাখ্যা: বয়ঃসন্ধিকালে সেক্স হরমোনের প্রভাবে জননাঙ্গ ও জননগ্রন্থির পূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়।
১.৭ থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত নিচের কোন বক্তব্যটি সঠিক?
(a) থ্যালাসেমিয়া হল এক ধরনের সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত রোগ
(b) থ্যালাসেমিয়া রোগে হিমোগ্লোবিন বেশি পরিমানে তৈরি হয়
(c) থ্যালাসেমিয়া হল এক ধরনের অটোজোম বাহিত রোগ
(d) থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বেড়ে যায়
সঠিক উত্তর: (c) থ্যালাসেমিয়া হল এক ধরনের অটোজোম বাহিত রোগ
ব্যাখ্যা: থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ যা অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনের দ্বারা বাহিত হয় এবং এতে ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষিত হয়।
১.৮ মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় একটি বিশুদ্ধ লম্বা মটরগাছের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ বেঁটে মটরগাছের সংকরায়ণ ঘটানো হলে \(F_2\) জনুতে প্রাপ্ত সংকর লম্বা মটরগাছ কত শতাংশ হবে?
(a) 25% (b) 50% (c) 75% (d) 100%
সঠিক উত্তর: (b) 50%
ব্যাখ্যা: \(F_2\) জনুর জিনোটাইপিক অনুপাত হলো ১(TT) : ২(Tt) : ১(tt)। এখানে সংকর লম্বা হলো Tt, যা মোট ৪ ভাগের ২ ভাগ, অর্থাৎ ৫০%।
১.৯ মানুষের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ক্রোমোজোমবিন্যাসগুলোর মধ্যে যেটি একজন স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেটি হল –
(a) 44A+XX (b) 44A+XXY (c) 44A+XY (d) 44A+XYY
সঠিক উত্তর: (c) 44A+XY
ব্যাখ্যা: স্বাভাবিক পুরুষের দেহকোশে ৪৪টি অটোজোম (44A) এবং দুটি সেক্স ক্রোমোজোম XY থাকে।
১.১০ মাতৃদুগ্ধ নিঃসরণে সাহায্য করে কোন হরমোন? –
(a) LTH (b) STH (c) ACTH (d) PTH
সঠিক উত্তর: (a) LTH
ব্যাখ্যা: LTH বা লিউটিওট্রপিক হরমোন (প্রোল্যাক্টিন) স্তনগ্রন্থির বিকাশ ও দুগ্ধ ক্ষরণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
১.১১ নিচের কোনটি সঠিক জোড় নয় তা নির্বাচন করো –
(a) আলু : বুলবিল (b) পত্রমুকুল : পাথরকুচি (c) অফসেট : কচুরিপানা (d) আলু : স্ফীতকন্দ
সঠিক উত্তর: (a) আলু : বুলবিল
ব্যাখ্যা: আলুর জনন অঙ্গ হলো স্ফীতকন্দ (Tuber), বুলবিল নয়। বুলবিল দেখা যায় চুপড়ি আলু বা অ্যাগেভ উদ্ভিদে। তাই এই জোড়টি সঠিক নয়।
১.১২ কোন প্রকার দূষণ ইউট্রিফিকেশন ঘটায়? –
(a) বায়ুদূষণ (b) জলদূষণ (c) মাটিদূষণ (d) শব্দদূষণ
সঠিক উত্তর: (b) জলদূষণ
ব্যাখ্যা: জলে ফসফেট ও নাইট্রেট জাতীয় সারের আধিক্যের ফলে শৈবালের অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটে (অ্যালগাল ব্লুম), যা ইউট্রিফিকেশন নামে পরিচিত। এটি জলদূষণের ফল।
১.১৩ সর্পগন্ধা গাছের বিপন্নতার কারণ হল –
(a) বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন (b) বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ (c) অতিব্যবহার (d) দূষণ
সঠিক উত্তর: (c) অতিব্যবহার
ব্যাখ্যা: উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (রেসারপিন) তৈরির জন্য সর্পগন্ধা গাছের মূলের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে এটি আজ বিপন্ন।
১.১৪ JFM-এর অধীনে প্রথম প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় শুরু হয়েছিল –
(a) নদীয়া (b) বীরভূম (c) বর্ধমান (d) পশ্চিম মেদিনীপুর
সঠিক উত্তর: (d) পশ্চিম মেদিনীপুর
ব্যাখ্যা: ১৯৭১ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আরাবাড়ি অরণ্যে প্রথম জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM) প্রকল্প চালু হয়।
১.১৫ একটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী স্বাধীনজীবী জীব হল –
(a) Clostridium (b) Thiobacillus (c) Rhizobium (d) Nitrobacter
সঠিক উত্তর: (a) Clostridium
ব্যাখ্যা: ক্লস্ট্রিডিয়াম (Clostridium) এবং অ্যাজোটোব্যাক্টর হলো স্বাধীনজীবী নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়া। রাইজোবিয়াম হলো মিথোজীবী।
জীবন বিজ্ঞান সমাধান - বিভাগ 'খ' (পৃষ্ঠা ১৪১-১৪২)
বিভাগ-‘খ’
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী
নিচের বাক্যগুলিতে উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যেকোনো পাঁচটি):
২.১ অক্ষিগোলকের ______ বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি শোষণ করে।
উত্তর: কোরয়েড (Choroid)।
২.২ পরাগনালিতে পুংগ্যামেটের সংখ্যা ______।
উত্তর: ২টি (Two)।
২.৩ মটরগাছের কোনো একটি ফিনোটাইপ ভিন্ন ভিন্ন ______ এর বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।
উত্তর: জিনোটাইপ (Genotype)।
২.৪ পায়রাকে অধিকতর প্লবতা প্রদান করে ______।
উত্তর: বায়ুথলি (Air sacs)।
২.৫ অম্লবৃষ্টি হল ______ এর ফলাফল।
উত্তর: বায়ুদূষণ (Air pollution)।
২.৬ পশ্চিমবঙ্গের লোথিয়ান দ্বীপ অভয়ারণ্যে ______ সংরক্ষণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
উত্তর: কুমির (Crocodile)।
নিচের বাক্যগুলো সত্য অথবা মিথ্যা নিরূপণ করো (যেকোনো পাঁচটি):
২.৭ স্নায়ুকোশের নিউরোলেমা স্থানে স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে র্যানভিয়ারের পর্ব গঠিত হয়।
উত্তর: মিথ্যা।
(সঠিক: মায়োলিন সিদ বিচ্ছিন্ন হয়ে র্যানভিয়ারের পর্ব গঠিত হয়)।
২.৮ উদ্ভিদকোশের মাইটোসিস বিভাজনের সময় সেন্ট্রিওল থেকে বেমতন্তু গঠিত হয়।
উত্তর: মিথ্যা।
(সঠিক: উদ্ভিদকোশে সেন্ট্রিওল থাকে না, মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতন্তু গঠিত হয়)।
২.৯ হিমোফিলিয়া X ক্রোমোজোমবাহিত একটি প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ যা বংশানুক্রমিক ভাবে সঞ্চারিত বৈশিষ্ট্য।
উত্তর: সত্য।
২.১০ পূর্ণাঙ্গ প্রাণীরা যত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত তাদের ভ্রূণের মধ্যে সাদৃশ্য তত বেশি হয়।
উত্তর: সত্য।
২.১১ ওরাং ওটাং হল পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি বিপন্ন প্রাণী প্রজাতি।
উত্তর: মিথ্যা।
(সঠিক: ওরাং ওটাং সুন্দাল্যান্ড হটস্পটে পাওয়া যায়)।
২.১২ ডেলটয়েড পেশি হাতকে দেহ অক্ষের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।
উত্তর: মিথ্যা।
(সঠিক: ডেলটয়েড পেশি অ্যাবডাকশন বা হাতকে দেহ থেকে দূরে নিতে সাহায্য করে)।
বাম স্তম্ভের সঙ্গে ডান স্তম্ভের সমতা বিধান করো (যেকোনো পাঁচটি):
| A-স্তম্ভ |
B-স্তম্ভ (সঠিক উত্তর) |
| ২.১৩ লোকাস |
(b) ক্রোমোজোম |
| ২.১৪ ক্যারিওকাইনেসিস |
(d) অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন |
| ২.১৫ গ্রাফটিং |
(f) স্টক ও সিয়ন |
| ২.১৬ ফড়িং ও পাখির ডানা |
(c) সমবৃত্তি ও অঙ্গ |
| ২.১৭ গাড়ির ধোঁয়া |
(a) সীসা |
| ২.১৮ ইতর পরাগযোগ |
(e) নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব |
একটি শব্দে বা একটি বাক্যে উত্তর দাও (যেকোনো ছয়টি):
২.১৯ বিসদৃশ শব্দটি বেছে লেখো : TSH, FSH, LH, ICSH
উত্তর: TSH।
(কারণ TSH থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর কাজ করে, বাকি তিনটি গোনাডোট্রপিক হরমোন বা জননগ্রন্থির ওপর কাজ করে)।
২.২০ মেন্ডেলের একসংকর জননের পরীক্ষায় প্রাপ্ত দ্বিতীয় অপত্য জনুর ফিনোটাইপিক অনুপাতটি লেখো।
উত্তর: ৩ : ১ (3:1)।
২.২১ নিচে সম্পর্কযুক্ত একটি শব্দজোড় দেওয়া আছে। প্রথম জোড়টির সম্পর্ক বুঝে দ্বিতীয় জোড়টির শূন্যস্থান উপযুক্ত শব্দ বসাও – আম : পিঁপড়ে :: ______ : পাখি।
উত্তর: শিমুল বা পলাশ।
(পাখির দ্বারা পরাগযোগ বা পক্ষীপরাগী ফুল)।
২.২২ সংকর লম্বা মটরগাছের জিনোটাইপ কি ধরনের?
উত্তর: বিষমসংকর বা হেটারোজাইগাস (Tt)।
২.২৩ দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় প্রাপ্ত সর্বাধিক ফিনোটাইপ অনুপাত কত ধরনের জিনোটাইপ নির্দেশ করে?
উত্তর: ৪ ধরনের।
(হলুদ-গোল ফিনোটাইপের জন্য জিনোটাইপ হতে পারে YYRR, YYRr, YyRR, YyRr)।
২.২৪ অপসারী বিবর্তনের উদাহরণ দাও।
উত্তর: তিমির প্যাডেল, ঘোড়ার অগ্রপদ, পাখির ডানা এবং মানুষের হাত (সমসংস্থ অঙ্গ)।
২.২৫ নিচের চারটি বিষয়ের মধ্যে তিনটি বিষয়ের অন্তর্গত সেই বিষয়টি খুঁজে বার করো এবং লেখো : করবেট, জলদাপাড়া, জাতীয় উদ্যান, কানহা।
উত্তর: জাতীয় উদ্যান (National Park)।
(করবেট, জলদাপাড়া ও কানহা – তিনটিই জাতীয় উদ্যান)।
২.২৬ পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্যের কারণটি কি?
উত্তর: অভিব্যক্তি বা বিবর্তন এবং প্রকরণ (Variation)।
জীবন বিজ্ঞান সমাধান - বিভাগ 'গ' (পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৪)
বিভাগ-‘গ’
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (২ নম্বরের প্রশ্ন)
৩.১ একজন কৃষক কৃত্রিম হরমোনকে তার কৃষিজমিতে ও ফলের বাগানে কোন কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন তা মূল্যায়ন করো।
ব্যবহার:
১) আগাছা বিনাশ: কৃত্রিম অক্সিন (যেমন 2,4-D) ব্যবহার করে জমির দ্বিবীজপত্রী আগাছা দমন করা যায়।
২) পার্থেনোকার্পি বা বীজহীন ফল উৎপাদন: কৃত্রিম অক্সিন (IBA, NAA) প্রয়োগ করে বীজহীন ফল (যেমন পেঁপে, আঙুর) উৎপাদন করা যায়।
৩) শাখা কলম তৈরি: গোলাপ, জবা গাছের কলম তৈরিতে মূল গজানোর জন্য কৃত্রিম অক্সিন ব্যবহার করা হয়।
৩.২ নিম্নলিখিত কাজগুলো মস্তিষ্কের কোন কোন অংশগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা স্থির করে সারণিবদ্ধ করো: • লালাক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ • মূত্র নির্গমন • ঘাম নিঃসরণ • দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ।
| কাজ |
মস্তিষ্কের অংশ |
| লালাক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ |
সুষুম্নাশীর্ষক (Medulla Oblongata) |
| মূত্র নির্গমন |
গুরুমস্তিষ্ক (Cerebrum) / পনস (Pons) |
| ঘাম নিঃসরণ |
হাইপোথ্যালামাস (Hypothalamus) [দেহউষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ] |
| দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ |
লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum) |
৩.৩ তুমি বিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের গোলরক্ষক হওয়ার সুবাদে খেলার সময় তোমার যে যে অস্থি-সন্ধি ও পেশি ব্যবহৃত হয় তার একটি তালিকা তৈরি করো।
তালিকা:
১) অস্থি-সন্ধি: বল ও সকেট সন্ধি (কাঁধ), কব্জা সন্ধি (কনুই ও হাঁটু), পিভট সন্ধি (ঘাড়)।
২) পেশি: বাইসেপস, ট্রাইসেপস (হাত ভাজ ও সোজা করতে), গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস (দৌড়াতে বা লাফাতে), ডেলটয়েড (হাত তুলতে)।
৩.৪ সাইকেল চালানোর সময় যে সকল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয় তার যেকোনো দুটি প্রতিবর্ত ক্রিয়ার নাম লেখো।
উত্তর:
১) ভারসাম্য রক্ষা: সাইকেল হেলে পড়লে শরীরের ওজনের বিপরীত দিকে ঝুঁকে ভারসাম্য বজায় রাখা (লঘুমস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত)।
২) দর্শন ও ব্রেক কষা: রাস্তায় হঠাৎ কোনো বাধা দেখলে চোখের গ্রাহক থেকে সংবেদ মস্তিষ্কে পৌঁছানো এবং দ্রুত হাত দিয়ে ব্রেক কষা (অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া)।
৩.৫ তোমার বন্ধুর হাতে একটি টিউমার তৈরি হয়েছে। এর সাথে কোশবিভাজন নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ক স্থাপন করো।
সম্পর্ক:
স্বাভাবিক অবস্থায় কোশচক্রের বিভিন্ন চেকপয়েন্টে কোশ বিভাজন নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু যদি এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায় এবং কোশগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বারবার বিভাজিত হতে থাকে, তবে একগুচ্ছ অবিভেদিত কোশপিণ্ড বা টিউমার সৃষ্টি হয়। এটি মূলত ম্যালিগন্যান্ট বা বিনাইন হতে পারে।
৩.৬ নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো মানব বিকাশের কোন কোন দশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা সারণির সাহায্যে লিপিবদ্ধ করো।
| বৈশিষ্ট্য |
বিকাশের দশা |
| আবেগ প্রবণতা বাড়ে, কল্পনাপ্রবণ এবং মেজাজি হয়, যৌন জীবনের সূচনা হয় |
বয়ঃসন্ধিকাল (Adolescence) |
| শ্রবণ শক্তি ও ঘ্রাণ শক্তি কমে আসে |
বার্ধক্য দশা (Senescence) |
| মুখ দেখে মানুষ চেনার চেষ্টা করে |
শৈশব (Infancy) |
| নেতৃত্বদান, বিচার ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা পরিণত হয় |
প্রাপ্তবয়স্ক দশা (Adulthood) |
৩.৭ নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে DNA ও RNA-র পার্থক্য নিরূপণ করো: • পিরিমিডিন ক্ষারকের প্রকৃতি • 5-C যুক্ত শর্করার নাম।
| বৈশিষ্ট্য |
DNA |
RNA |
| পিরিমিডিন ক্ষারকের প্রকৃতি |
সাইটোসিন (C) ও থাইমিন (T) থাকে। |
সাইটোসিন (C) ও ইউরাসিল (U) থাকে। |
| 5-C যুক্ত শর্করার নাম |
ডি-অক্সি রাইবোজ শর্করা। |
রাইবোজ শর্করা। |
৩.৮ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গে “কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মায়েরা লাঞ্ছিত হন” – এই সমস্যার সঙ্গে লিঙ্গ নির্ধারণ সম্পর্কিত বংশগতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করো।
ব্যাখ্যা:
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে মাতার কোনো ভূমিকা নেই। মাতা হোমোগ্যামেটিক, অর্থাৎ কেবল এক ধরনের গ্যামেট (X) তৈরি করেন। পিতা হেটারোগ্যামেটিক, তিনি দুই ধরনের শুক্রাণু (X এবং Y) তৈরি করেন।
নিষেককালে পিতার X-ক্রোমোজোম যুক্ত শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে কন্যা সন্তান (XX) এবং Y-ক্রোমোজোম যুক্ত শুক্রাণু নিষিক্ত করলে পুত্র সন্তান (XY) জন্মায়। তাই কন্যা সন্তানের জন্মের জন্য মাকে দায়ী করা বিজ্ঞানসম্মত নয়।
৩.৯ মটরগাছের বীজের ক্ষেত্রে মেন্ডেলের নির্বাচিত প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো সারণির সাহায্যে লিপিবদ্ধ করো।
| বীজের চরিত্র |
প্রকট বৈশিষ্ট্য |
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
| বীজের আকার |
গোল (Round) |
কুঞ্চিত (Wrinkled) |
| বীজের বর্ণ (বীজপত্রের বর্ণ) |
হলুদ (Yellow) |
সবুজ (Green) |
৩.১০ “বংশে থ্যালাসেমিয়ার ইতিহাস থাকলে জেনেটিক কাউন্সিলিং জরুরি” – এই বিষয়ে তোমার মতামত ব্যাখ্যা করো।
মতামত:
১) বাহক নির্ণয়: জেনেটিক কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে জানা যায় বিবাহে ইচ্ছুক পাত্র-পাত্রী থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা।
২) ঝুঁকি হ্রাস: দুজন বাহকের বিবাহ হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫% থাকে। কাউন্সিলিং এই ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে এবং সুস্থ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।
৩.১১ একটি খাদক মাছের উপস্থিতি অনুভব করে ভাসতে থাকা পোনামাছটি জলের গভীরে প্রবেশ করল। মাছের এইরূপ অভিযোজনের জন্য দায়ী অঙ্গটির ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা:
মাছের পটকা (Swim bladder) একটি উদস্থিতীয় অঙ্গ। মাছটি জলের গভীরে যাওয়ার জন্য পটকার পশ্চাৎ প্রকোষ্ঠে অবস্থিত 'রেটি মিরাবিলি' (Rete mirabile) নামক রক্তজালক দিয়ে গ্যাস শোষণ করে নেয়। এর ফলে পটকার আয়তন কমে যায় এবং মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, ফলে মাছটি অনায়াসেই জলের গভীরে ডুবে যায়।
৩.১২ এক শৃঙ্গযুক্ত গন্ডারের দুটি ইনসিটু সংরক্ষণ পদ্ধতি আলোচনা করো।
পদ্ধতি:
১) জাতীয় উদ্যান: আসামের কাজিরাঙা এবং পশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়া ও গরুমারা জাতীয় উদ্যানে গন্ডারদের প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। এখানে চোরাশিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
২) অভয়ারণ্য: গন্ডারের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয় এবং মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৩.১৩ পেঁয়াজের শল্কপত্র ও ক্যাকটাসের পত্রকন্টক কি ধরনের অভিব্যক্তিকে সূচিত করে – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
এটি অপসারী বিবর্তন (Divergent Evolution) বা সমসংস্থ অঙ্গের উদাহরণ।
ব্যাখ্যা: পেঁয়াজের শল্কপত্র এবং ক্যাকটাসের কাঁটা উভয়ই উৎপত্তিগতভাবে পাতা (Leaves)। কিন্তু পরিবেশের ভিন্নতার কারণে পেঁয়াজের পাতা খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য এবং ক্যাকটাসের পাতা বাষ্পমোচন রোধ ও আত্মরক্ষার জন্য কাঁটায় রূপান্তরিত হয়েছে। উৎপত্তি এক কিন্তু কাজ আলাদা হওয়ায় এটি অপসারী অভিব্যক্তি।
৩.১৪ তেলাপিয়া মাছের ব্যাপক চাষ দেশীয় প্রজাতির মাছগুলোর বিপন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
বিচার:
তেলাপিয়া একটি বহিরাগত আগ্রাসী প্রজাতি (Invasive Species)। এরা অত্যন্ত সহনশীল এবং দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম। এরা জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করে দেশীয় মাছের (যেমন মৌরলা, পুঁটি) খাদ্য ও বাসস্থানের দখল নেয় এবং অনেক সময় ছোট মাছদের খেয়ে ফেলে। ফলে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে দেশীয় মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বা বিপন্ন হচ্ছে।
৩.১৫ নিয়মিত সিগারেট সেবনকারী ব্যক্তির সঙ্গে একই ঘরে দীর্ঘদিন থাকার ফলে তোমার শ্বসনতন্ত্রের কি কি ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে?
প্রভাব (প্যাসিভ স্মোকিং):
১) শ্বাসকষ্ট ও ব্রঙ্কাইটিস: সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত পদার্থ শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
২) ফুসফুসের ক্যান্সার: কার্সিনোজেনিক উপাদান দীর্ঘমেয়াদীভাবে ফুসফুসের কোশের ডিএনএ পরিবর্তন করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩) অ্যাজমা: ধোঁয়া অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে হাঁপানির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩.১৬ সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যার সঙ্গে দ্রুত নগরায়ন ও দূষণের সম্পর্ক কি?
সম্পর্ক:
১) নগরায়ন: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য কেটে বসতি ও কৃষি জমি তৈরি করা হচ্ছে, ফলে বাঘ ও অন্যান্য প্রাণীর বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে।
২) দূষণ: শিল্প ও শহরের বর্জ্য পদার্থ নদীতে মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে, যা সুন্দরবনের জলজ প্রাণী এবং সুন্দরী গাছের শ্বাসমূলের ক্ষতি করছে।
৩.১৭ স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে PBR-এর ভূমিকা লিপিবদ্ধ করো।
ভূমিকা:
১) নথিভুক্তকরণ: PBR (People's Biodiversity Register) স্থানীয় এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি, তাদের বাসস্থান এবং ব্যবহারিক গুরুত্ব নথিভুক্ত করে।
২) জ্ঞান সংরক্ষণ: স্থানীয় মানুষদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান সংরক্ষণ করে এবং বিপন্ন প্রজাতি চিহ্নিত করে তাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে।
জীবন বিজ্ঞান সমাধান - বিভাগ 'ঘ' (পৃষ্ঠা ১৪৩-১৪৪)
বিভাগ-‘ঘ’
দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫)
৪.১ অক্ষিগোলকের একটি পরিচ্ছন্ন চিত্র অঙ্কন করো এবং নিম্নলিখিত অংশগুলি চিহ্নিত করো: স্ক্লেরা, আইরিশ, অন্ধবিন্দু ও কর্নিয়া।
দ্রষ্টব্য: এটি একটি চিত্রাঙ্কন প্রশ্ন। পাঠ্যবই দেখে মানুষের চোখের লম্বচ্ছেদের চিত্রটি আঁকবে। বাইরের সাদা আবরকটি 'স্ক্লেরা', লেন্সের সামনের পেশিবহুল পর্দাটি 'আইরিশ', সামনের স্বচ্ছ অংশটি 'কর্নিয়া' এবং রেটিনা ও অপটিক স্নায়ুর সংযোগস্থলটি 'অন্ধবিন্দু' হিসেবে চিহ্নিত করবে।
অথবা, একটি দ্বিসন্ধি প্রতিবর্ত পথের চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করো।
দ্রষ্টব্য: পাঠ্যবই বা সহায়ক বই দেখে প্রতিবর্ত চাপের চিত্রটি আঁকবে যেখানে গ্রাহক, সংজ্ঞাবহ স্নায়ু, স্নায়ুকেন্দ্র (সুষুম্নাকাণ্ড), আজ্ঞাবহ স্নায়ু এবং কারক পেশি প্রদর্শিত হবে।
৪.২ ইউক্রোমাটিন ও হেটারোক্রোমাটিনের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে পার্থক্য নিরূপণ করো: • রঞ্জক ধারণ • সক্রিয়তা • কুন্ডলীর প্রকৃতি। একটি কোশচক্রের ইন্টারফেজ দশায় কি কি রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়?
| বিষয় |
ইউক্রোমাটিন |
হেটারোক্রোমাটিন |
| রঞ্জক ধারণ |
ইন্টারফেজ দশায় হালকা বর্ণ এবং বিভাজন দশায় গাঢ় বর্ণ ধারণ করে। |
ইন্টারফেজ দশায় গাঢ় বর্ণ এবং বিভাজন দশায় হালকা বর্ণ ধারণ করে। |
| সক্রিয়তা |
জিনগতভাবে বেশি সক্রিয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষে অংশ নেয়। |
জিনগতভাবে নিষ্ক্রিয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষে সাধারণত অংশ নেয় না। |
| কুন্ডলীর প্রকৃতি |
ইন্টারফেজ দশায় কম কুন্ডলীকৃত বা প্রসারিত অবস্থায় থাকে। |
ইন্টারফেজ দশায় বেশি কুন্ডলীকৃত বা ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। |
কোশচক্রের ইন্টারফেজ দশার \(G_1\) উপদশায় কোশের বিপাকীয় কাজের জন্য বিভিন্ন প্রকার RNA এবং প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়। \(S\) দশায় বা সংশ্লেষ দশায় প্রধানত DNA প্রতিলিপি গঠিত হয় এবং হিস্টোন প্রোটিন তৈরি হয় যা ক্রোমোজোম গঠনের জন্য অপরিহার্য। পরবর্তী \(G_2\) উপদশায় বেমতন্তু গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় টিউবিউলিন প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান সংশ্লেষিত হয়।
অথবা, নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে অযৌন জনন ও যৌন জননের পার্থক্য নিরূপণ করো: কোশবিভাজনের প্রকৃতি, অপত্য জনুর প্রকৃতি, জনিতৃ জীবের সংখ্যা। বিলুপ্ত প্রায় জীববৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখতে কোন কোন ধরনের কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তারের সাহায্য নেওয়ার দরকার বলে মনে করো তা ব্যাখ্যা করো।
| বৈশিষ্ট্য |
অযৌন জনন |
যৌন জনন |
| কোশবিভাজনের প্রকৃতি |
প্রধানত মাইটোসিস বা অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে। |
গ্যামেট উৎপাদনে মিয়োসিস এবং জাইগোট বিভাজনে মাইটোসিস ঘটে। |
| অপত্য জনুর প্রকৃতি |
অপত্য জীব হুবহু জনিতৃ জীবের মতো হয় (ক্লোন)। |
অপত্য জীবে নতুন বৈশিষ্ট্যের সমাগম ঘটে (প্রকরণ দেখা যায়)। |
| জনিতৃ জীবের সংখ্যা |
সাধারণত একটি জনিতৃ জীব থেকেই সম্পন্ন হয়। |
সাধারণত দুটি ভিন্ন লিঙ্গের (পুং ও স্ত্রী) জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়। |
বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতিগুলিকে দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি করার জন্য এবং তাদের বিশুদ্ধ গুণাবলী বজায় রাখার জন্য মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। এই পদ্ধতিতে খুব অল্প সময়ে অসংখ্য চারাগাছ তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া গ্রাফটিং বা জোড়কলম পদ্ধতির মাধ্যমে দুর্বল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ডালকে অন্য সবল গাছের স্টকের সাথে জুড়ে বাঁচিয়ে রাখা এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব।
৪.৩ হিমোফিলিয়া বাহক মহিলার সহিত স্বাভাবিক পুরুষের বিবাহ হলে তাদের কন্যা সন্তানদের কত শতাংশ হিমোফিলিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবে তা চেকারবোর্ডের সাহায্যে দেখাও। সংকরায়নের পরীক্ষায় মেন্ডেলের সাফল্য লাভের কারণ কি কি তা উল্লেখ করো।
বাহক মহিলা (\(X^+X^h\)) এবং স্বাভাবিক পুরুষ (\(X^+Y\))-এর বিবাহ হলে:
গ্যামেট: মাতা (\(X^+, X^h\)) এবং পিতা (\(X^+, Y\))
ফলাফল:
১) \(X^+X^+\) (স্বাভাবিক কন্যা)
২) \(X^+X^h\) (বাহক কন্যা)
যেহেতু কোনো কন্যাসন্তানই \(X^hX^h\) জিনোটাইপ প্রাপ্ত হয়নি, তাই ০% (শূণ্য শতাংশ) কন্যা হিমোফিলিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবে। কন্যারা হয় স্বাভাবিক হবে অথবা বাহক হবে।
মেন্ডেলের সাফল্যের প্রধান কারণগুলি হলো— তিনি পরীক্ষার জন্য মটরগাছ নির্বাচন করেছিলেন যা দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম এবং বহু বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যযুক্ত। তিনি এক সময়ে এক বা দুই জোড়া নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়েই পরীক্ষা করেছিলেন, ফলে ফলাফল বিশ্লেষণ সহজ হয়েছিল। এছাড়া তিনি সংকরায়ণ পরীক্ষার ফলাফলগুলি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গাণিতিক ও পরিসংখ্যানগতভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন।
অথবা, একটি বিশুদ্ধ হলুদ গোল বীজযুক্ত মটর গাছের [YYRR] সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সবুজ কুঞ্চিত বীজযুক্ত মটর গাছের [yyrr] সংকরায়ণের ফলাফল \(F_2\) জনু পর্যন্ত চেকারবোর্ডের সাহায্যে দেখাও। অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলতে কি বোঝ?
\(F_1\) জনুতে সকল উদ্ভিদ হলুদ ও গোল বীজযুক্ত (YyRr) হবে।
\(F_2\) জনুতে স্ব-পরাগযোগের ফলে যে ১৬টি অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হবে তাদের ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে ৯:৩:৩:১।
৯ ভাগ হলুদ-গোল, ৩ ভাগ হলুদ-কুঞ্চিত, ৩ ভাগ সবুজ-গোল এবং ১ ভাগ সবুজ-কুঞ্চিত উদ্ভিদ পাওয়া যাবে। (পরীক্ষার খাতায় ১৬ ঘরের চেকারবোর্ড এঁকে গ্যামেট ও জিনোটাইপগুলি দেখাতে হবে)।
যে বংশগতি প্রক্রিয়ায় বিষমসংকর বা হেটারোজাইগাস জীবের ক্ষেত্রে প্রকট জিনটি প্রচ্ছন্ন জিনের ওপর সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হতে পারে না, ফলে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মাঝামাঝি একটি তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে, তাকে অসম্পূর্ণ প্রকটতা বলে। উদাহরণস্বরূপ, সন্ধ্যামালতী ফুলে লাল ও সাদা ফুলের ক্রসে গোলাপি ফুলের উৎপত্তি।
৪.৪ “অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সূত্র” ব্যাখ্যা করো। ঘোড়ার জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ থেকে কোন কোন পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়?
ল্যামার্কের মতবাদ অনুসারে, জীব তার জীবদ্দশায় পরিবেশের প্রভাবে বা অঙ্গের ব্যবহার-অপব্যবহারের ফলে যে সমস্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। একেই অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সূত্র বলে। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানে এই তত্ত্বটি অনেকাংশে বর্জিত হয়েছে।
ঘোড়ার আদিমতম পূর্বপুরুষ 'ইওহিপ্পাস' থেকে আধুনিক 'ইকুয়াস' পর্যন্ত বিবর্তনের ধারায় যে পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করা যায় তা হলো—
১) উচ্চতা বৃদ্ধি: শেয়ালের মতো ছোট আকার থেকে বর্তমানের বড় আকার।
২) পায়ের গঠন: পায়ের আঙুলের সংখ্যা ৪টি বা ৩টি থেকে কমে ১টি শক্ত খুরে পরিণত হয়েছে, যা দ্রুত দৌড়াতে সাহায্য করে।
৩) দাঁতের গঠন: ঘাস চিবিয়ে খাওয়ার উপযোগী হওয়ার জন্য পেষক ও পুরঃপেষক দাঁতের ক্রাউন অংশের আকার ও জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অথবা, মেরু ভল্লুককে কি কি জীবন সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা আলোচনা করো। ডারউইনের মতবাদ সম্পর্কিত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করো: • অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম • যোগ্যতমের উদ্বর্তন • প্রাকৃতিক নির্বাচন।
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, ফলে মেরু ভল্লুকের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে। খাবারের সন্ধানে তাদের দীর্ঘ পথ সাঁতার কাটতে হচ্ছে, যার ফলে তারা ক্লান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া সিল মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে, যা তাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলছে।
১) অস্তিত্বের জন্য জীবন সংগ্রাম: সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য জীবকে পরিবেশের প্রতিকূলতা এবং স্বপ্রজাতি ও পরপ্রজাতির জীবের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়।
২) যোগ্যতমের উদ্বর্তন: জীবন সংগ্রামে লিপ্ত জীবদের মধ্যে যাদের দেহে অনুকূল প্রকরণ বা ভেদ থাকে, তারাই কেবল প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয়ে বেঁচে থাকার অধিকারী হয়।
৩) প্রাকৃতিক নির্বাচন: যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবেরা অন্যদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পায় এবং প্রকৃতি দ্বারা নির্বাচিত হয়ে বংশবিস্তার করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে।
৪.৫ বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন কিভাবে জীবাণু দ্বারা সংবন্ধন হয় তা উদাহরণ সহ লিপিবদ্ধ করো। জেটপ্লেনের ওঠানামা বেড়ে গেলে কি কি দূষণ ঘটতে পারে?
বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনকে মাটিতে আবদ্ধ করার জন্য জীবাণুরা প্রধান ভূমিকা নেয়।
১) স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া: 'অ্যাজোটোব্যাক্টর' ও 'ক্লস্ট্রিডিয়াম' বাতাসের নাইট্রোজেন সরাসরি শোষণ করে নিজেদের দেহে প্রোটিন হিসেবে আবদ্ধ করে, যা পরে মাটিতে মেশে।
২) মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া: 'রাইজোবিয়াম' শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাস করে এবং বায়ুর নাইট্রোজেনকে নাইট্রেট লবণে পরিণত করে মাটিতে আবদ্ধ করে।
৩) সায়ানোব্যাকটেরিয়া: 'অ্যানাবিনা' বা 'নস্টক' এর মতো নীলাভ-সবুজ শৈবালও নাইট্রোজেন সংবন্ধনে সক্ষম।
জেটপ্লেনের ইঞ্জিন থেকে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO) এবং অন্যান্য গ্যাস বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরকে পাতলা করে দেয়, যা অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশে সহায়তা করে। এছাড়া জেটপ্লেন থেকে নির্গত অ্যারোসল কণা মেঘ সৃষ্টি করে যা তাপ আটকে রেখে বিশ্ব উষ্ণায়নে বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এ অবদান রাখে। এটি শব্দদূষণেরও একটি বড় কারণ।
অথবা, ব্রংকাইটিস ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে মানুষের পেশার সম্পর্ক স্থাপন করো। JFM প্রকল্প সফল হলে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার কি কি পরিবর্তন আসতে পারে তা অনুমান করে লেখো।
যেসব মানুষ কয়লা খনি, অ্যাসবেস্টস কারখানা বা বস্ত্রশিল্পে কাজ করেন, তাদের শ্বসনতন্ত্রে কয়লার গুঁড়ো বা সূক্ষ্ম তন্তু প্রবেশ করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে ব্রংকাইটিস, ব্ল্যাক লাং ডিজিজ বা অ্যাসবেস্টোসিস হয়। দীর্ঘ দিন ধরে কার্সিনোজেনিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকায় ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকিও এদের অনেক বেশি।
জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM) সফল হলে স্থানীয় অধিবাসীরা বনজ সম্পদ (যেমন মধু, মোম, কাঠ, ভেষজ উদ্ভিদ) থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে। এর ফলে তাদের কর্মসংস্থান বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। এছাড়া বনাঞ্চল সুরক্ষিত থাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে, যা তাদের কৃষি ও পশুপালনে পরোক্ষভাবে সাহায্য করবে এবং তারা বনরক্ষায় আরও উৎসাহী হবে।
৪.৬ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি সমস্যা হল বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়ন – এর ফলাফল কি কি হতে পারে আলোচনা করো। নিম্নলিখিত জীববৈচিত্র্যের সংখ্যা অধিক কমে যাওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করো : মৌমাছি, মৌরলা ও পুঁটি মাছ, মেরু ভল্লুক ও গঙ্গার শুশুক।
অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে বনভূমি ধ্বংস ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাস (\(CO_2, CH_4\)) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে (বিশ্ব উষ্ণায়ন)। এর ফলাফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ছে, উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে এবং আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন (খরা, বন্যা) দেখা দিচ্ছে। এটি বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
১) মৌমাছি: কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এদের মৃত্যু ঘটছে।
২) মৌরলা ও পুঁটি মাছ: জলাশয়ে রাসায়নিক সার ও বর্জ্য মিশে জলদূষণ এবং ইউট্রিফিকেশনের কারণে অক্সিজেনের অভাবে এরা মারা যাচ্ছে।
৩) মেরু ভল্লুক: বিশ্ব উষ্ণায়নে বরফ গলে যাওয়ায় এদের বাসস্থান ও খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে।
৪) গঙ্গার শুশুক: নদীতে বাঁধ নির্মাণ ও শিল্পবর্জ্যের দূষণে এদের সংখ্যা কমছে।
অথবা, কোনো অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বলে ঘোষণা করতে চাইলে কি কি শর্ত মানতে হবে তা উল্লেখ করো। ড্রাগ ও ওষুধ প্রস্তুতিতে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব আলোচনা করো।
১) এনডেমিক প্রজাতি: ওই অঞ্চলে অন্তত ১৫০০ প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ থাকতে হবে যা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না (এনডেমিক)।
২) বিপন্নতা: ওই অঞ্চলের আদি বাসস্থানের অন্তত ৭০ শতাংশ ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে বা প্রজাতিগুলি চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
১) ওষুধ প্রস্তুতি: শিঙ্কোনা (কুইনাইন), সর্পগন্ধা (রেসারপিন), নয়নতারা (ভিনক্রিস্টিন)-এর মতো ভেষজ উদ্ভিদ থেকে ম্যালেরিয়া, উচ্চরক্তচাপ ও ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের ওষুধ তৈরি হয়।
২) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য: জীববৈচিত্র্য খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালকে অটুট রাখে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশে \(O_2\) ও \(CO_2\)-এর ভারসাম্য, জলচক্র নিয়ন্ত্রণ এবং মাটি উর্বর রাখতে সাহায্য করে, যা বাস্তুতন্ত্রের স্থায়িত্ব বজায় রাখে।