Posts

পথের দাবির গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

1. 'পথের দাবি' রচনায় অপূর্ব চরিত্রটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। উত্তর : ভূমিকা: কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত কালজয়ী উপন্যাস পথের দাবি। সেই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্ব। তৎকালীন ভারতবর্ষের আর পাঁচজন যুবকের মতো স্পষ্টভাষী ও দেশপ্রেমিক তরুণ। তার চরিত্রের কতগুলি বৈশিষ্ট্য সহজেই চোখে পড়ে। বিপ্লবী সম্বন্দ্বে শ্রদ্ধাশীল: অপূর্ব জানত গিরীশ মহাপাত্র আসলে ছদ্মবেশী সব্যসাচী মল্লিক। তিনি সত্যিকারের সাহসী, বিপ্লবী মানুষ, দেশের প্রতি, জন্মভূমির প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাই তার প্রতি অপূর্বর হৃদয়ের ভালোবাসা ছিল। আবেগ প্রবণ: অপূর্ব একজন ব্রাহ্মণ মানুষ, সে রেঙ্গুনে চাকরি করত। সে মনে মনে চেয়েছিল সব্যসাচী যেন নির্বিঘ্নে পুলিশ স্টেশন থেকে ফিরে যেতে পারে। পরবর্তীকালে তার সম্পর্কে অপূর্বের বিপুল শ্রদ্ধা ও আবেগ প্রকাশ পেয়েছে। দেশপ্রেমিক: অপূর্ব দেশপ্রেমিক ছিলেন তাই গিরীশ মহাপাত্র রূপী সব্যসাচীকে মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করেছিল। অপূর্ব অবাক হয়েছিল। এই কারণে যে তিনি দেশের মঙ্গলের জন্য নিজের শখ, আহ্লাদ ত্যাগ করেছেন। লাঞ্ছনার স্বীকার: অপূর্বকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছিল। ইংরেজ যুবকরা তাকে স্টেশন থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সে অপমান অপূর্ব কোনওদিন ভুলতে পারেনি। অমায়িক ব্যবহার: অপূর্বর ব্যবহার সবাইকে মুগ্ধ করে। রামদাসের বাড়িতে সে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং তার পত্নীর অনুরোধে খাবার গ্রহণ করে। অপূর্বর ব্যবহারের মধ্যে একনিষ্ট ভাব দেখতে পাওয়া যায়। মূল্যায়ন: সবদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায় অপূর্ব আলোচ্য কাহিনি অংশে মুখ্য চরিত্র। তার doing and suffering উপন্যাসের স্বার্থকতাকে ইঙ্গিতবাহী করে তুলেছে। 2. পথের দাবী রচনায় নিমাইবাবুর চরিত্রটি ব্যাখ্যা কর। উত্তর: ভূমিকা: পথের দাবি রচনায় নিমাইবাবু চরিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সাধারণ পরিচয় হল, তিনি পুলিশবাহিনীতে বড়োবাবু। এই গল্পের অন্যতম চরিত্র অপূর্ব নিমাইবাবুকে আগে থেকে জানত। যোগ্য নেতৃত্বপ্রধান: নিমাইবাবু পুলিশ কর্মচারীদের মধ্যে বড়োবাবু। তাই তার কথাই শেষ কথা হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে। অর্থাৎ সমস্ত বিষয়কেই তিনি চালনা করেছেন। রসিকতাবোধ: নিমাইবাবুর বিচক্ষণতা চোখে পড়ার মতো। তিনি সব্যসাচী ৰূপী, গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও অপূর্ব রূপসজ্জার প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কর্তব্যবোধ: নিমাইবাবু কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সব্যসাচীর মতো রাজবিদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করা আবশ্যক। তাই কোথাও তার কাজের ফাঁকি রাখতে রাজি ছিল না। উদার ও আন্তরিক: নিমাইবাবু ছিলেন উদার ও আন্তরিক মানুষ। তিনি অনুভব করেছিলেন, গিরীশ মহাপাত্রের ভগ্ন স্বাস্থ্যের অন্যতম কারণ তার এই গঞ্জিকা সেবন। তাই তিনি অনুরোধ করেছিলেন যেন গঞ্জিকা না খায়। মানবিক চরিত্র: নিমাইবাবু ছিলেন সুবিবেচক। তাই তিনি গিরীশ মহাপাত্রকে আন্তরিক উপদেশ দিয়েছিলেন এবং থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মূল্যায়ন: স্বল্প আয়তনে নিমাইবাবুর চরিত্রটি আমাদের মুগ্ধ করে। এই চরিত্রের মানবিক দিকটিও আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। 3. পথের দাবি রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রটি সংক্ষেপে লেখ। উত্তর: ভূমিকা: পথের দাবি মূলত রাজনৈতিক উপন্যাস। এই উপন্যাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন চরিত্র। পথের দাবির মূল চরিত্র সব্যসাচী মল্লিক। আমাদের পাঠ্য বইতে তিনি হলেন ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র। সর্বত্যাগী বিপ্লবী: গিরীশ মহাপাত্র ছদ্মবেশে সব্যসাচী মল্লিক। পুলিশ স্টেশন থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দেশের মানুষের মঙ্গল চেয়েছিলেন তাই বৃহৎ কর্তব্যের অঙ্গীকারে তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয়েছিল। পলিটিক্যাল আসামি সব্যসাচী যথার্থই ছিলেন দেশপ্রেমিক। তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট রূপে। নিমাইবাবুর চোখে তিনি রাজ বিদ্রোহী। সব্যসাচীর চোখে অবশ্য তিনি মুক্তিপথের অগ্রদূত। আমাদের চোখে তিনি দেশের কান্ডারি। বহু গুণান্বিত চরিত্র: সব্যসাচীর গুণের অন্ত ছিল না। তিনি একজন ব্রাহ্মণ ঘরের সন্তান। লেখাপড়া জানেন। একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। স্বাস্থ্য সম্পর্কে তার জ্ঞান আছে। ধর্মভীরু মানুষ: অপূর্বকে কথা প্রসঙ্গে সব্যসাচী জানিয়েছিলেন সে ধর্মভীরু মানুষ। সে কানো নেশা করে না আসলে ছদ্মবেশ ধারণের জন্য তাকে এমন আচরণ করতে হয়েছিল। বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র: গিরীশ মহাপাত্র অর্থাৎ সব্যসাচী মল্লিক নিঃসন্দেহেই বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র। তিনি এমনভাবে নিজেেক উপস্থাপন করেছিলেন যাতে তার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ না থাকে। মূল্যায়ন: এভাবে গিরীশ মহাপাত্রের অন্তরালে থাকা সব্যসাচী মল্লিক চরিত্রটি হয়ে উঠেছে জীবন্ত চরিত্র।

Post a Comment