1. বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রের বর্ণনা দাও?
উত্তর:
ভূমিকা: সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের নামাঙ্কিত ছোটো গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রিয় চরিত্র বহুরূপী হরি তাকে ও তার শিল্পী সত্তার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যগুলিকে অবলম্বন করে সমগ্র কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। চরিত্রটি একটি একমুখী কাহিনি। বিশ্বের উত্থানপতন যা ঘটলেও চরিত্রটির মধ্যে বৈচিত্র্য অবশ্যই আছে।
সাধারণ পরিচয়: খুবই দরিদ্র ছিলেন হরিদা। শহরের সবথেকে সরু একটা ছোটো ঘরে তিনি থাকতেন। দারিদ্র দূর করার জন্য মাঝে মাঝে তাকে বহুরুপী সাজাতে হত।
স্বাধীনতা বোধ: হরিদা অন্যের অধীনে কাজ করতে চান না। কারণ তার মধ্যে অদ্ভুত এক স্বাতন্ত্র্যবোধ ছিল। আর এই স্বাধীনচেতা স্বভাবের জন্য ঘড়ি মিলিয়ে কাজ তিনি করেননি।
মিসুকে স্বভাবের মানুষ তিনি লোকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। তাই তার ঘরে পাড়ার ছেলেরা আড্ডায় বসত।
আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ হরিদার মনের মধ্যে এক আধ্যাত্মিক জগৎ ছিল।
তাই সন্ন্যাসীর বার্তা জানতে পেরে তিনি বলেন-
"থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতে পারতাম"।
কৌতুক প্রিয়তা: হরিদার মধ্যে এক সাধারণ কৌতুকময়তা ছিল। তাই বহুরূপীর ছদ্মবেশে তিনি মানুষকে এমনভাবে তৃপ্তি দিতেন যা সাধারণভাবে স্বাধিকার পরিচয়
বহন করত।
নিপুণ শিল্পী: নিজের বহুরূপী পেশায় তিনি নিপুণ শিল্পী। তাই অনেকে চিনতে পারত না। তার বহুরুপী পেশাকে অনেকে আসল ভেবেছে।
মূল্যায়ন: বহুরূপীর জীবনের মূল চাহিদা হল মনরঞ্জনের চাহিদা। প্রতারণার দ্বারা অর্থ উপার্জন নয়। মানুষকে আনন্দ দান করা আর একমাত্র প্রাসঙ্গিক বিষয়। তাই যে হাসি মূলত বলতে পারে-
মানুষ তো নয় এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী কী আশা করতে পারে।
2. 'আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব'- অথবা,
'এবার মারিত হাতি লুঠিত ভাণ্ডার'- জগদীশবাবুর বাড়িতে কী ঘটনা ঘটেছিল তা লেখো।
উত্তর:
বহুরূপী খেলা হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বহুরূপী ছদ্মবেশে অভিনব খেলা দেখিয়েছিলেন। হরিদা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। মাঝে মাঝে বহুরূপীর বেশ ধারণ করে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করতেন। হিমালয়বাসী এক সন্ন্যাসী কীভাবে পাড়ার ধর্মবিশ্বাসী জগদীশবাবুকে ঠকিয়ে নিজের প্রাপ্তির ভান্ডার পূর্ণ করেছিলেন তা পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে শুনে হরিদার মাথাতেও জগদীশবাবুকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জনের দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলে ওঠেন-'এবার মারিত হাতি লুঠিত ভাণ্ডার'। একবারেই যা আদায় করে নেবে ভেবেছিল তাতে তার সারা বছর চলে যাবে। পাড়ার ছেলেদের তিনি বলেন তারা যদি এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে চায় তবে তারা যেন সকলে জগদীশবাবুর বাড়িতে চলে আসে। ছেলেরা চাঁদা নেওয়ার জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হয়। জগদীশবাবুর
বাড়িতে যে বিচিত্র বিন্যাসে হরিদা হাজির হন তাতে চিনতে খুব অসুবিধা হয় ছেলেদের। তার খোলা গা, তার ওপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীও, পরনে সাদা থান। জগদীশবাবুর ভক্তি উজার হয়ে ওঠেন। তিনি বিরাগীটিকে তার ওখানে থাকতে বলেন। তিনি তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো টাকা দিতে চান, সবকিছু ফিরিয়ে দেন হরিদা। জগদীশবাবুর কথাতে তিনি উপদেশ শোনান-'পরমসুখ কাকে বলে জানেন?' সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। এরপর হরিদা সেই জায়গা পরিত্যাগ করেন। তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করেননি। গল্পকার এই ঘটনার মাধ্যমে হরিদা নির্লভ স্বভাবকে তুলে ধরেছেন।
3. "পরম সুখ কাকে বলে জানেন সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া"।- এ বক্তব্য হরিদার জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে বলো।
উত্তর: হরিদার জীবনের প্রভাব গল্পকার সুবোধ ঘোষের বহুরুপী গল্পটি এক অদ্ভুত মানুষের জীবনকে কেন্দ্রকরে রচিত। তার বহিঃজীবন ছিল দরিদ্র অভাবে বিষাদে দগ্ধ। কিন্তু অন্তঃজীবন ছিল মহা ঐশ্বর্য। এই ঐশ্বর্য আসলে সম্পদ নয়। এই ঐশ্বর্য ছিল তার চিন্তাশীলতা এবং বিবেগবোধ। যে পেশায় বহুরূপী তাই মানুষের মুখাপেক্ষী তাকে থাকতে হয় কিন্তু তাই বলে যে নিজের পেশার ওপর কোনো অন্যায় করে না। দশটা পাঁচটা সাধারণ কাজে যে আনন্দ খুঁজে পায় না। বহুরূপীর মধ্যে যে একজন দার্শনিক কম করে তা যেন হরিদা নতুনভাবে আবিষ্কার করে। বিরাগী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর প্রণামীর টাকা নিতে সে অস্বীকার করে। জগদীশবাবুকে সে শেখায় পরমসুখ মানে সর্বসুখ নয় সুখ দুঃখের সহ বন্ধন থেকে মুক্তি হল পরমসুখ। আসলে ব্যক্তিগত জীবনে হরিদা এই পরমসুখ অর্জন করেছিল। তা না হলে সামান্য রোজগারে অর্ধেক দিন উপোশ থাকা হরিদা কীভাবে একশো টাকার থলি পায়ে ঢেলে দেয়। প্রকৃত সত্যিটি হল সুখের সন্ধান বড়ো বড়ো সন্ন্যাসী, মধ্যবৃত্তরা, শহরের ক্ষুদ্র গলির মধ্যেও বাস করলেও বহুরূপীর জীবনে সার্থক মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।