অভিষেক কবিতার বিশ্লেষণ ধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন
1. অভিষেক কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্তর: ভূমিকা: বাল্মীকি বা কৃত্তিবাসের মতো ইন্দ্রজিৎকে দেখেননি মধুসূদন। ইন্দ্রজিৎ কবির মানসপুত্র। কবি এই চরিত্র সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তার মধ্যে দুটি বক্তব্য এই চরিত্রের গুরুত্বকে চিনিয়ে দেয়।
(ক) ইন্দ্রজিৎ হলেন Glorious son of Ravana |
(খ) He was a noble fellow.
দুর্জন সাহস: প্রমোদ উদ্যানে ধাত্রী প্রভাসার ছদ্মবেশে রাজলক্ষ্মীর মুখে মহাবলী বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি অবাক হন। তৎক্ষণাৎ যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প
গ্রহণ করেন। গভীর সাহসের সঙ্গে রামচন্দ্রকে হত্যা করার কথা ভাবেন। অগাধ পত্নী প্রেম: প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের দাম্পত্য সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। প্রমীলা ইন্দ্রজিতকে ছাড়তে না চাইলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলাকে বলেছে তার দৃঢ় বন্ধন
থেকে ছিন্ন করার ক্ষমতা কারোর নেই।
সরল পিতৃভক্তি ও কর্তব্য বোধ ইন্দ্রজিৎ শুধুমাত্র পিতার প্রতি ভালোবাসা দেখাননি, তার কর্তব্য সম্পর্কে সে সজাগ তাই পিতাকে বলেছে পুত্র বেঁচে থাকতে পিতার যুদ্ধ করতে যাওয়া কলঙ্কের কথা।
দেশের প্রতি ভালোবাসা মধুসুদন দত্তের ইন্দ্রজিৎ লঙ্কাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাই লঙ্কার দুর্দিনে লঙ্কাকে মুক্ত করার সংকল্প সে গ্রহণ করেছে। আত্মবিশ্বাস: ইন্দ্রজিৎ চরিত্রের সব থেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য তার আত্মবিশ্বাস। তাই ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার সর্বনাশ শুনে সে বলেছে সমূলে শত্রুকে বিনাশ
করবে।
মূল্যায়ন: মধুসূদনের কাছে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন favourite। তাই তার বীরত্ব ও বংশ মর্যাদাকে কৃতিত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। ইন্দ্রজিৎকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্র হিসাবে গড়ে তুলেছেন তিনি।
2. অভিষেক কবিতায় প্রমীলার চরিত্রটি উল্লেখ করো।
উত্তর:
ভূমিকা: সীতা চরিত্র পরিকল্পনায় মধুসুদন দত্ত আদি কবি বাল্মীকিকে অনুসরণ করেছে কিন্তু প্রমীলা চরিত্র নির্মাণে কবি পাশ্চাত্য নারীকে তুলে ধরেছেন। সীতা যেমন বাল্মীকির মানস দুহিতা। প্রমীলা তেমন মধু কবির মানস প্রতিমা।
অসামান্য চরিত্র: নারী সম্পর্কিত চরিত্রগুলিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছেন। প্রমীলার মতো বীরাঙ্গনা চরিত্র শক্তি ও সুন্দরতার সমন্বয়। তাই এই চরিত্রটি অসামান্য।
সুযোগ্য পত্নী: প্রমীলা ইন্দ্রজিতের সুযোগ্য পত্নী। ইন্দ্রজয়ী ইন্দ্রজিৎকে তিনি জয় করেছেন প্রেমের পবিত্র পরশে। ইন্দ্রজিৎ তাই বলেছেন, প্রমীলা তাকে শক্ত ভাবে
ধরে রেখেছেন।
বিরহীনি নায়িকা: সাময়িক পতি বিরোহ প্রমীলার পক্ষে অসহনীয় অভিষেক নামাঙ্কিত এই কবিতায় দেখা যায়। প্রমীলার বিপুল শূন্যতা বোধ। স্বামী যুদ্ধে যেতে চাইলে প্রমীলা অস্থির হয়ে ওঠে।
পতি প্রেমে মুগ্ধা: নারী যে স্বামীকে গভীরভাবে ভালোবাসে তার প্রমাণ হল প্রমীলা। তাই ইন্দ্রজিতের মতো শক্তিশালী বীরকে তিনি প্রেমের আবেশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
দাম্পত্য প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রমোদ কাননে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার হাস্য উজ্জ্বলময়
দাম্পত্য প্রেমের যে ছবি আমাদের মধ্যে ভেসে ওঠে তাতে প্রমাণিত হয় তারা দাম্পত্য প্রেমের এক সুখী দম্পতি।
মূল্যায়ন: অভিষেক কবিতার সামান্য পরিসরে প্রমীলা চরিত্রটি অসামান্য। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও চিরন্তনতায় প্রমীলা অসাধারণ।