Posts

প্রলয়োল্লাস কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

1. প্রলয়োল্লাস কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখ। উত্তর: মূল বক্তব্য: বাংলা সাহিত্যের কবি নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো অপ্রত্যাশিত আকস্মিক। তিনি ঝড়ের বেগে রীতিমতো প্রলয় সৃষ্টি করে পরাধীন জাতির মুক্তির স্বপ্নকে আলোকিত করে। কবি নজরুল প্রলয়োল্লাস নামাঙ্কিত কবিতার সূচনাতে কালবৈশাখী ঝড়কে আহ্বান করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন প্রচণ্ড গতিতে যেমন করে কালবৈশাখী সবকিছু ভেঙ্গে চুরে দেয় তেমন করে নটরাজ শিব সবকিছু ভেঙে আবার নতুন জগৎ তৈরি করবেন। পুরাণের নটরাজ শিবের রুদ্র মূর্তিকে কবি প্রলয়োল্লাস কবিতায় বিশেষ তাৎপর্যে ব্যবহার করেছেন। কবি হিসাবে নজরুল বিদ্রোহী। তার দুর্দান্ত বিদ্রোহে সমাজের সমস্ত অবিচার অত্যাচার অনাচার দূরিভূত হয়েছিল। তিনি সেকেলে সংস্কার, প্রাচীন চিন্তাধারা যেমন বদলাতে চেয়েছিলেন, তেমন ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশে বন্ধ মানুষের দুর্দশা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি বলেছেন-অনাগত মহাকাল এমনভাবে এগিয়ে আসবে যার ফলে সিন্ধু পারে সিংহদ্বারের আগল যাবে ভেঙে। মৃত্যু গহন অন্ধকারে এক সময় জ্বলে উঠবে বজ্রশিখার মশাল। আর তেখন সমস্ত অশুভ শক্তি দূর হয়ে যাবে। নজরুল মনে করেন সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতুর মতো সহসা আবির্ভূত হয়ে রক্ত কৃপাণ হাতে অট্টহাসিতে মুখর করে শত্রুর রুক্ষ বিদীর্ণ করবেন। তার অট্টহাসিতে কম্পিত হবে আসুরিক শক্তি তিনি এই পুরাণ কল্পনার পাশাপাশি শিল্পের রুদ্রমূর্তিকে বিশেষভাবে স্মরণ করেছেন। অর্থাৎ একইসঙ্গো শিবকালী এই শক্তিকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে কবি এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে-অন্ধকারার বন্ধ কূপে এবার আশার আলো পৌঁছে যাবে আর তখন অসুন্দর, অত্যাচারী রাজশক্তি ধীরে ধীরে লুপ্ত হবে। জেগে উঠবে চিরসুন্দর। সেই সুন্দরকে কবি বরণ করে নিতে বলেছেন। প্রলয়োল্লাস কবিতায় প্রলয়ের মধ্যে সৃষ্টি উল্লাস দেখেছেন কবি। তাই এই কবিতা হয়ে উঠেছে ধ্বংসের শেষে সৃষ্টির উদ্ভুত এক আনন্দের প্রতিচ্ছবি। 2. 'বজ্র শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর'- ভয়ংকর বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তার সম্পর্কে আর কোন বিশেষণ ব্যবহার হয়েছে? তার এমন রূপে আগমণের কারণ কবিতা অবলম্বনে লেখ। উত্তর: ভয়ংকর কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রলয়োল্লাস কবিতা সংগৃহিত আলোচ্য অংশে ভয়ংকর বলতে বোঝানো হয়েছে ভয় সৃষ্টিকারী প্রলয়ংকর শক্তিতে। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় তথা অচল আয়তনে বিভীষিকাময়রূপ নিয়ে যার আগমন যার দর্শনে ভাসমান মানব হৃদয় বেদনায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে অনাগত বিপদের সম্ভাবনা এখানে সেই রূপ সত্তাকে ভয়ংকর বলে অভিহিত করা হয়েছে। ভয়ংকরের বিশেষণ ভয়ংকরকে কবি অন্য যে বিশেষণে অভিহিত করেছেন তা হল প্রলয় নেশার নৃত্যপাগল অর্থাৎ এখানে ভয়ংকর রূপে বিদ্রোহী কবি মহাদেবের চণ্ডরূপকে চিহ্নিত করেছেন। আগমনের কারণ: প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় আমরা অভ্যস্থ হয়ে পড়ি। একী প্রবাহমান ধারায় আমরা প্রবাহিত হতে থাকি। নতুনকে আমরা তখন সহজে বহন করতে চায় না। ইংরেজ শাসনে বন্দি আমাদের ভারতমাতা। শৃঙ্খলাবদ্ধ একশো কোটি সন্তান তারা পরাধীনতার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। অজ্ঞানতার অন্ধকারে তারা নিমজ্জিত। এই অন্ধকারকে ছিন্ন করে স্বাধীনতার রূপ আলোকে উদ্‌ভাসিত করতে আসছে ভয়ংকর যাকে কবি মহাদেব বলে অভিহিত করেছেন। মহাকালের রূপ নিয়ে তার আগমন কাল প্রবাহে পুরাতনকে ধ্বংস করে বজ্রের শিখার মতো আলোক বর্তিকা নিয়ে তার আগমন। তিনি আমাদের হৃদয়ের অন্ধকার রূপ অজ্ঞানতা দূর করে জ্ঞান রূপ আলোক ধারায় প্রবাহিত করে দেবে। তাই যিনি আমাদের পরাধীনতার প্রসার অন্ধকার দূর করতে স্বাধীনতার আলোকে দীপ্ত পথে নিয়ে যাবে তাকে ভয়ংকর রূপে কবি মনে করেছেন।

Post a Comment