১. বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি [MCQ]
** সঠিক উত্তরটি চিহ্নিত করো:
১.১ "আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।" কথাটি বলেছেন-
[A] ছোটো মাসি[B] ছোটো মেসো
[C]মেজো কাকু ✅
[D] বড়ো মামা
১.২ 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে ' জহুরি বলতে যাকে বোঝানো হয়েছে তিনি হলেন-
[A] নতুন মেসো ✅[B] ছোটো মেসো
[C] মেজোকাকু
[D] ছোটো মাসি
১.৩ ছোটোমেসো তপনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন সঙ্গে নিয়ে-
[A] সন্ধ্যাতারা পত্রিকা ✅[C] আনন্দমেলা পত্রিকা
[B] চাঁদমামা পত্রিকা
[D] শুকতারা পত্রিকা
১.৪ তপনের লেখা গল্পের নাম ছিল-
[A] প্রথম পরীক্ষা [B] শেষ রাত
[C] প্রথম দিন ✅
[D] অবসর
১.৫ গল্প লেখক তপন-এর সম্পূর্ণ নাম হল-
[A] তপনকান্তি রায়[B] তপনকুমার রায় ✅
[C] তপন চন্দ্র রায়
[D] তপন রায়
১.৬ বাড়িতে তপনের নাম হয়ে গেছিল-
[A] কবি সম্রাট[B] কথাশিল্পী
[C] সাহিত্য সম্রাট
[D] কবি-সাহিত্যিক কথাশিল্পী ✅
১.৭ "না কি অতি আহ্লাদে বাক্য হরে গেল?" এখানে 'হরে গেল' এই শব্দবন্ধটির অর্থ হল-
[A] হারিয়ে যাওয়া ✅[B] হৃষ্ট হওয়া
[C] হেরে যাওয়া
[D] হরণ করা
১.৮ তপনের লেখা গল্পটি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন-
[A] তপনের বাবা[B] তপনের ছোটোমেসো
[C] তপনের ছোটো মামা
[D] তপনের ছোটো মাসি ✅
১.৯ 'তবু ধন্যি ধন্যি পড়ে যায়'- 'ধন্যি
ধন্যি'-র অর্থ হল-
[A] তামাশা[B] প্রশংসা ✅
[C] বাঙ্গ
[D] নিন্দা
১.১০ 'জ্ঞানচক্ষু' একটি-
[A] বড়োগল্প[B] ছোটো গল্প ✅
[C] উপন্যাস
[D] নাটক
১.১১ তপনের লেখা গল্পটি সংশোধন করে
দিয়েছিলেন-
[A] তপনের মা[B] তপনের ছোটো মাসি
[C] তপনের ছোটো মেসো ✅
[D] তপনের ছোটো মামা
১.১২ যাকে দেখে তপনের চোখ মার্বেলের মতন হয়ে গেল-
[A] বাবাকে[B] দিদিকে
[C] নতুন পিসেমশাইকে
[D] নতুন মেশোমশাইকে ✅
১.১৩ তপনের চোখ মার্বেল হয়ে যাওয়ার অর্থ-
[A] অবাক হয়ে যাওয়া ✅[B] চোখ পাকানো
[C] রেগে যাওয়া
[D] চোখ লাল হয়ে যাওয়া
১.১৪ নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন-
[A] গায়ক [B] বই প্রকাশক
[C] লেখক ✅
[D] শিক্ষক
১.১৫ "কথাটা শুনে_____চোখ মার্বেল হয়ে গেল।" (শূন্যস্থানে শব্দ বসাও)
[A] তপনের ✅[C] নতুন পিশেমশাইয়ের
[B] নতুন মশোমশাইয়ের
[D] রমেনের
১.১৬ এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের। সন্দেহের বিষয়টি হল লেখকরা-
[A] গল্পকার [B] ঔপন্যাসিক
[C] কবি
[D] মানুষ ✅
১.১৭ মেশোমশাই যে পত্রিকার সম্পাদককে চিনতেন-
[A] শুকতারা [B] সন্ধ্যাতারা ✅
[C] চাঁদমামা
[D] আনন্দমেলা
১.১৮ 'শুধু এইটাই জানা ছিল না।' অজানা বিষয়টি হল-
[A] সে গল্প লিখতে পারে[B] তার গল্প ছাপা হবে
[C] মানুষই গল্প লেখে ✅
[D] মেসো একজন বিখ্যাত কবি
১.১৯ 'এ দেশের কিছু হবে না।'- এই কথাটির প্রবক্তা হলেন-
[A] তপন[B] ছোটো মাসি
[C] ছোটো মেসো ✅
[D] তপনের বাবা
১.২০ তপনের লেখা গল্প তার মেসোমশাইকে দিয়েছিল-
[A] ছোটোমাসি ✅[B] তপনের বন্ধু
[C] তপনের বাবা
[D] তপনের মা
১.২১ তপনের ছোটো মাসি তপনের চেয়ে বড়ো ছিলেন-
[A] পাঁচ বছরের[B] আট বছরের ✅
[C] দশ বছরের
[D] পনেরো বছরের
১.২২ "তাই অহরহই জলজ্যান্ত একজন লেখককে দেখবার সুযোগ হবেই তপনের।" - এখানে 'অহরহ' বলতে বোঝানো হয়েছে-
[A] খুবই কম[B] বিশেষ দিন
[C] প্রতিদিন
[D] মাঝে মধ্যে ✅
১.২৩ "কি রে তোর যে দেখি পায়াভারী হয়ে গেল"- 'পায়াভারী' শব্দটির অর্থ হল-
[A] অহংকারী হয়ে যাওয়া ✅[C] গম্ভীর হয়ে যাওয়া
[B] মোটা হয়ে যাওয়া
[D] ভারিক্কি হয়ে যাওয়া
১.২৪ তপন মোট গল্প লিখেছিল-
[A] একটা[B] দুটো ✅
[C] তিনটে
[D] চারটে
১.২৫ "তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়।"-তপনের দৃষ্টিতে কী ছিল?
[A] দুঃখ [B] অপমান
[C] অবিশ্বাস ✅
[D] কষ্ট
২.১ "যেন নেশায় পেয়েছে!"-এখানে কোন্ নেশার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: তপনের গল্প লেখার নিরলস চেষ্টার কথা এখানে বলা হয়েছে। হোম টাস্ক ফেলে রেখে, লুকিয়ে লুকিয়েও সে গল্প লিখে গেছে।
২.২ "শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন”- তপনের সংকল্প কী ছিল?
উত্তর: তপন সংকল্প করেছিল যে, যদি কখনো লেখা ছাপাতে হয়, তাহলে তপন নিজে গিয়ে তা পত্রিকার অফিসে জমা দেবে।
২.৩ কেন তপন হঠাৎ একটা ভয়ানক উত্তেজনা অনুভব করেছিল?
উত্তর: গ্রীষ্মের নিথর দুপুরে সিঁড়িতে নিরিবিলিতে একাসনে বসে একটা আস্ত গল্প শেষ করে তপন। সেটা পড়ার পরে ভয়ানক উত্তেজনায় তপন 'লেখক' হয়ে ওঠার অনুভূতি অনুভব করেছিল।
২.৪ "বাবা, তোর পেটে পেটে এত।"-এটি কোন প্রকার বাক্য?
উত্তর: "বাবা, তোর পেটে পেটে এত।"-এটি একটি বিস্ময়বোধক বাক্য।
২.৫ "কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।”- কোন্ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল?
উত্তর: তপন তার বালক বয়সে কোনোদিন কোনো লেখককে স্বচক্ষে দেখেনি। কবি-লেখকরাও যে আমাদের মতো সাধারণ বাস্তব জগতের প্রাণী এ কথাই তপন জানত না। তাই সে যখন শুনল যে, তার সদ্যবিবাহিতা ছোটোমাসির স্বামী অর্থাৎ তার নতুন মেসো একজন লেখক-তখন বিস্ময়ে তার চোখ মার্বেলের মতো হয়ে গেল।
২.৬ "বাবা, তোর পেটে পেটে এত"-কে কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছিলেন?
উত্তর: আশাপূর্ণাদেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে তপন যে একটি আস্ত গল্প লিখে ফেলেছে এবং তার ছোটো মেসো ছাপিয়ে দেবেন-তা বাড়ির কেউ বিশ্বাস করেননি, বরং তাকে নিয়ে নানারকম ঠাট্টা-তামাশা হয়েছে। অবশেষে তপনের গল্প প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায় তার মা তাকে উপরোক্ত কথাটি বলেছিলেন।
২.৭ লেখালেখি ছাড়া তপনের নতুন মেসোর পেশা কী?
উত্তর: লেখালেখি ছাড়া তপনের নতুন মেসো কলেজের একজন অধ্যাপক।
২.৮ "আর তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না...."-এখানে কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এক জায়গায় বসে তপনের একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলার প্রসঙ্গে উপরোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।
২.৯ "তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন” -দিনটিতে কোন্ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর: তপনের জীবনে প্রথমবার তার লেখা গল্প 'সন্ধ্যাতারা' নামক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। কিন্তু ছাপার পর দেখা যায় যে, তার গল্পের অনেকাংশই লেখক মেসো সংশোধনের নামে নতুন করে লিখেছিলেন। এই ঘটনায় ব্যথিত তপনের মনে হয়েছিল, আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।
৩.১ "কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল"- কোন্ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে তপনের ছোটো মেসোমশাই বই লিখতেন আর তাঁর বই ছাপার অক্ষরেও প্রকাশিত হত। তপনের মনের মধ্যে লেখককে দেখার একটি সুপ্ত বাসনা ছিল। তার ধারণাই ছিল লেখকরা যেন অন্য জগতের মানুষ। লেখকদের অতিমানবত্ব নিয়ে সে মনের মধ্যে নানারকম আজগুবি ধ্যানধারণা পোষণ করত। একজন লেখককে সামনে থেকে দেখা তার কাছে এক স্বপ্নপূরণের মতো ছিল। তাই ছোটো মেসোমশাই বই লেখেন আর সেই বই ছাপাও হয় শুনে তপনের চোখ মার্বেলের মতো হয়ে গেল।
৩.২ "ছোটোমাসিই ওর চিরকালের বন্ধু"- উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: বন্ধুত্ব সাধারণত সমবয়সিদের মধ্যে নয়তো সহপাঠীদের মধ্যে গড়ে ওঠে। কিন্তু কখনো কখনো বয়সের পার্থক্য থাকলেও হৃদয়ের সুখ-দুঃখের আদান-প্রদানের সঙ্গীও বিশেষ বন্ধু হয়ে ওঠে। আশাপূর্ণাদেবীর 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে তপনের ছোটোমাসি তপনের থেকে আট বছরের বড়ো হলেও চলা-বলা এবং ভাবভঙ্গিতে সমবয়সি। কাজেই মামার বাড়ি এসে ছোটোমাসিই তার সব। অর্থাৎ আনন্দ করা বা সুখ-দুঃখের কথা জানানোর জন্য ছোটোমাসিই তপনের কাছে একান্ত আপনজন এবং চিরকালের বন্ধু।
৩.৩ "তারপর ধমক খায়" তপনের ধমক খাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের প্রধান চরিত্র তপন 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় সদ্য প্রকাশিত নিজের লেখা গল্পটি সকলকে পড়ে শোনাতে উদ্যত হয়। কিন্তু পড়তে গিয়ে সে আশ্চার্যের সঙ্গে লক্ষ করে যে, তার লেখক ছোটো মেশোমশাই তার গল্পটি সংশোধনের নামে প্রায় সম্পূর্ণটাই বদলে ফেলেছেন। এই ঘটনায় হতবাক তপনের অভিমানে গলা বুজে আসে। এদিকে গল্প পড়তে না শুরু করায় সকলে অধৈর্য হয়ে তপনকে ধমক দিতে শুরু করেন।
৩.৪ তপনের কাছে কোন বিষয়টি কেন 'আনকোরা' মনে হয়েছে?
উত্তর: বাড়িতে চায়ের ভরা আসরে মায়ের অনুরোধে নিজের সদ্য ছাপানো গল্প পাঠ করতে গিয়ে গল্পটি তপনের একেবারে 'আনকোরা' ও 'অচেনা' লেগেছে।
লেখক নতুন মেসোমশাই তপনের মূল গল্পটিকে 'কারেশান এবং ইয়ে করে' সম্পাদকের সঙ্গে তার বিশেষ খাতিরকে কাজে লাগিয়ে 'সন্ধ্যাতারা' নামক পত্রিকাতে প্রকাশ করে দেন। সেখানে তপনের কাঁচা হাতের লেখায় উঠে আসা নিজস্ব অভিজ্ঞতা-অনুভূতি সব নির্মমভাবে ব্রাত্য হয়ে যায়। তার বদলে লেখক ছোটোমেসোর নিজস্ব পাকা ভাবনা প্রাধান্য পায়। গল্প একেবারে বদলে যায়। তাই নিজের হাতে লেখা গল্পটিই একেবারে 'আনকোরা' মনে হয় তপনের।
৩.৫ "রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই জহুরি কাকে বলে? একথাটি বলার কারণ কী ছিল?
উত্তর: 'জওহর' এই আদি শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে 'জহর' থেকে। জহর অর্থাৎ
বহুমূল্য রত্ন নিয়ে যে ব্যাবসা করে বা রত্ন আসল না নকল তা চেনে আভিধানিক অর্থে তাকেই 'জহুরি' বলে। এই গল্পে বিশেষ দক্ষতা বোঝাতে শব্দটির অবতারণা করা হয়েছে। আলোচ্য গল্পে 'জহুরি' বলতে লেখক ছোটোমেসোমশাইকে বোঝানো হয়েছে। কারণ ছোটোমেসোমশাই একদিকে একজন প্রফেসর (অধ্যাপক) মানুষ, তেমনি তিনি একজন
লেখকও বটে। সুতরাং তিনিই একটা গল্প বা লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবেন বা তার মান কতখানি তা যাচাই করতে পারবেন। স্বর্ণকার যেমন সোনা চেনেন এবং সহজে কোনটি খাঁটি ও কোল্টি নকল তা বলে দিতে পারেন। তেমনি একজন লেখক তথা জ্ঞানী ব্যপ্তিই গল্প সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন। এই অর্থে ছোটো মেসোশাইকে 'জহুরি' বলা হয়েছে।
৩.৬ "তপনকে এখন 'লেখক' বলা যেতে পারে"-একথা মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: তপন ছোটোবেলা থেকে অনেক বই পড়েছে। ফলে গল্প কীরকম হয় সেই বিষয়ে তার মোটামুটি একটা ধারণা হয়েছে। একদিন দুপুরে তপন তার স্কুলে ভরতির প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে। গল্পটার নাম দেয় 'প্রথম দিন'। একটা গোটা গল্প লিখে ফেলেছে একথা ভেবে সে নিজেই অবাক হয়ে যায়, তাই তপনের বিশ্বাস ছিল, তাকেও এখন 'লেখক' বলা যেতে পারে।
৩.৭ "আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।" 'আমাদের' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের কোন্ চেষ্টার কথা বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বস্তা তপনের 'মেজোকাকু', 'আমাদের' বলতে এখানে নিজেকে এবং
বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের কথা বলা হয়েছে।
লেখক ছোটোমেসোর দৌলতে তপনের আনাড়ি হাতের লেখা গল্পও নামী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কিশোর তপনকে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করার পরিবর্তে তার মেজোকাকু উদ্ধৃত উক্তিটির দ্বারা সুযোগ পেলে যে তাঁরাও গল্প লিখতে পারতেন সেই কথাটাই এখানে বোঝানো হয়েছে।
1. "এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের।"- কোন বিষয়ে কেন তপনের সন্দেহ ছিল?
উত্তর: তপনের সন্দেহ নিরশন আশাপূর্ণা দেবী রচিত জ্ঞানচক্ষু নামক গল্প থেকে অংশটি গৃহীত হয়েছে। তপন জানত না যে, লেখকরা তার বাবা, কাকা কিংবা মামার মতো একজন সাধারণ মানুষ। তার সন্দেহ দূর হয় ছোটো মেসোমশাইকে দেখে। তিনি একজন লেখক। কিন্তু অন্য সাধারণ মানুষের মতো দাড়ি কামান। সিগারেট খান, খাবার অতিরিক্ত হলে ফিরিয়ে দেন, স্নান করেন, ঘুমোন। এমনকি আর সকলের মতো খবরের কাগজের খবর নিয়ে গল্প কিংবা তর্ক করেন। অবসর সময়ে সিনেমা দেখেন কিংবা বেড়াতেও বের হন। এসব দেখে তপনের সন্দেহ দূর হয় ও সে বিশ্বাস করে লেখকরাও সাধারণ মানুষ।
2. রত্নের মূল্য জহুরির কাছে। রত্ন এবং জহুরি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: রত্ন ও জহুরি আশাপূর্ণা দেবী রচিত জ্ঞানচক্ষু নামাঙ্কিত গল্পে রত্ন বলতে তপনের লেখা গল্পটিকে এবং জহুরি বলতে তপনের ছোটো মেসোকে বোঝানো হয়েছে।
তপন যে গল্পটি লিখেছিল তা দেখে তার ছোটো মাসি যথেষ্ট ভালো বললেও প্রকৃত বিচারকের রায় দরকার ছিল তপনের। আর এই বিষয়ে লেখক হিসাবে পরিচিত তার ছোটোমেসো যে যোগ্য ব্যক্তি তাতে কারো সন্দেহ থাকতে পারে না। তাই রত্নের মূল্য ও গুরুত্ব যেমন একজন জহুরি সবথেকে ভালো বোঝেন। তেমনই তপনের গল্পের কদরও ছোটোমেসোই বুঝতে পারবে।
3. তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনে সবচেয়ে দুঃখের দিন। কী কারণে তপনের এরূপ মনে হয়েছিল?
উত্তর: তপনের মনে হওয়ার কারণ তপনের প্রথম লেখা গল্পটি নতুন মেসোমশাই-এর সুপারিশে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ছাপা গল্পটি পাঠ করে তপন অবাক হয়ে যায়। কারণ তার নতুন মেসোমশাই গল্পটিকে ঠিকঠাক করতে গিয়ে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছেন। ছাপানো গল্পের মধ্যে তপন নিজেকে খুঁজে পায় না। তার মনে হয় অন্য কারোর লেখা ছাপা হয়েছে। শ্রী তপন কুমার রায় নাম দিয়ে। নিজের সৃষ্টিকে পরিবর্তিত হতে দেখে তপনের মন বেদনায় ভরে ওঠে।
4. "শুধু এ দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন।" কোন দুঃখের মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে। তপন কী সংকল্প নিয়েছিল?
উত্তর: দুঃখের মুহূর্ত: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় নিজের ছাপা গল্প পড়তে গিয়ে যখন তপন বুঝল গল্পটি ছোটো মেসোমশাই আগাগোড়া কারেকশান করে দিয়েছেন। নিজের গল্পে নিজেকে না পেয়ে তপন খুব দুঃখ পেয়েছিল।
তপনের সংকল্প: এই দুঃখের মুহূর্তে তপন সংকল্প করে, যদি কখনো নিজের লেখা ছাপতে দেয়, তবে কারো মাধ্যমে নয়, নিজে গিয়ে পত্রিকা অফিসে দিয়ে আসবে। যদি তাতে তার গল্প ছাপা না হয় তবুও। কারণ কেউ সুপারিশ করে তার লেখা ছেপে দিয়েছে এমন কথা যেমন অপমানের, তেমনই কষ্টের। নিজের লেখা পড়তে গিয়ে অন্যের লেখা পড়া খুবই কষ্টকর।
5. "ক্রমশ ও কথাটা ছড়িয়ে পড়ে।"-কোন কথা, ওই কথা ছড়িয়ে পড়ায় কী ঘটেছিল?
উত্তর: কারেকশানের কথা: তপনের প্রকাশিত গল্পটি আসলে ছোটো মেসোমশাই কিছুটা কারেকশান করে দিয়েছেন-এই কথাটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বাড়িতে। মেসোর মহত্তের কথা ছোটো মেমোমশাই-এর কারেকশানের কথা বাড়ির সবাই জেনে গেলে তপনের গল্প লেখার কৃতিত্ব খানিকটা কমে যায়। তপনের বাবা, কাকা, ছোটো মেসোমশাই-এর হাতের ছোঁয়াকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। সেদিন পারিবারিক আলোচনায় তপনের গল্পের কথা উঠলেও নতুন মেসোর মহত্ত্বের কথা ঘুরে ফিরে আসে।
6. "বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের"- কখন এবং কেন তপনের এরকম অনুভূতি হয়েছিল?
উত্তর: তপনের অনুভূতি পুজোর ছুটির অনেকদিন পর ছোটোমাসি আর মেসোমশাই হাতে একখানা সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সেই দিন তপনের এইরকম অনুভূতি হয়েছিল।
সাহিত্য রচনা এবং প্রকাশ সম্পর্কে তপনের দারুণ কৌতূহল ছিল তাই ছোটো মেসোমশাই তার লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপানোর জন্য যখন নিয়ে গিয়েছিলেন তখন তপন উৎসাহিত হয়। তবে অপেক্ষা করতে করতে তপন গল্প প্রকাশের আশা ছেড়ে দিয়েছিল। ঠিক এই সময় ছোটো মাসি আর মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তাদের বাড়িতে আসায় তার গল্প প্রকাশের আবেগ উৎকণ্ঠায় তপনের এরকম অনুভূতি হয়েছিল।
7. পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে, কার মধ্যে কেন এমন ভাবনার উদয় হয়েছিল?
উত্তর: ভাবনার উদয় গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের মধ্যে এমন ভাবনার উদয় হয়েছিল। তপনের লেখা গল্প ছাপা হয়ে প্রকাশিত হবে। এটা ছিল তপনের কাছে কল্পনার অতীত। ফলে মেসোর হাতে সন্ধ্যাতারা পত্রিকা দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। তবে কী সত্যিই তার গল্প ছাপা হয়েছে এবং সে লেখা হাজার হাজার ছেলের হাতে ঘুরবে। তপনের কাছে এটা একটা অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়।
৪. 'যেন নেশায় পেয়েছে'- কীসের নেশা, কীভাবে তাকে নেশায় পেয়েছে?
উত্তর: লেখার নেশা আশাপূর্ণা দেবীর জ্ঞানচক্ষু গল্পে তপনের গল্প লেখার নেশার কথা বলা হয়েছে।
লেখার প্রতি আসক্তি: তপন একজন সাহিত্য প্রেমী বালক। গল্প লেখা ও সেগুলি ছাপা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে তার প্রচন্ড কৌতূহল ছিল। মাসির বিয়ের পর লেখক মেসোমশাইকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায় এবং গল্প লেখার রহস্যও তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তপন একটি গল্প লিখে ছোটোমাসিকে দেখালে মাসি সেটা মেসোমশাইকে দেখায়। তখন তিন সেটা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এতে আরও উৎসাহিত হয়ে তপন একের পর এক গল্প লেখার নেশায় মগ্ন হয়ে ওঠে।
9. 'সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়'- সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: শোরগোল পড়ে যাওয়ার কারণ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে তপনের লেখা গল্প ছেপে বেরোলে সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। জ্ঞানচক্ষু গল্পে দেখা যায়-তপনের কাঁচা হাতের গল্পটিকে মেসো সংশোধন করে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সন্ধ্যাতারা সম্পাদককে দিয়ে প্রকাশ করিয়েছেন। জীবনের প্রথম গল্প ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হলে অনাবিল উত্তেজনায় তপন আনন্দে মাতোয়ারা হয়। আর সেই খবরে সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়।
৪.১ 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে তপন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: গল্পকার আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটির কেন্দ্রীয় ও প্রধান চরিত্র হল তপন নামে এক কিশোর। সে নিতান্ত অনভিজ্ঞতার কারণে বিশ্বাস করে যে, যাঁরা গল্প উপন্যাস লেখেন, তাঁরা পৃথিবীতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নন। তার এই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে যায়, যখন তার লেখক নতুন ছোটো মেসোকে দেখে। শিশুসুলভ অনুকরণপ্রিয়তার অথবা নিজের অন্তর্গত প্রবণতার কারণে সেও একটি গল্প লিখে ফেলে। নিজের লেখা গল্প পড়ে গর্ববোধ করে তপন। উপরন্তু লেখক ছোটো মেসোর প্রশংসা ও 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় তার গল্প ছাপিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার তপনের মনে আশার সঞ্চার করে। সে গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে, কবে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখতে পাবে। অবশেষে যখন ছোটোমাসি ও ছোটো মেসোর হাত দিয়ে পত্রিকার সেই সংস্করণটি তার হাতে আসে, যাতে তার একটা গল্প ছাপার অক্ষরে ছাপা হয়েছে তখন তার আনন্দ যেন কোনো বাঁধ মানে না। এই পর্যন্ত তপনের আচরণ আর পাঁচটা কিশোরের মতোই ছিল। কিন্তু যখন সে আবিষ্কার করে যে, ছোটো মেসো তার রচিত গল্পটিকে সংশোধনের নামে প্রায় পরিবর্তন করে দিয়েছেন, তখন একজন খাঁটি লেখকের মতোই সে ভেঙে পড়ে। কেউ জানতে না পারলেও তার নিজের লেখক সত্তা অপমানিত হয়। সে ইচ্ছে করলে লেখার কৃতিত্ব নিজে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারত। কিন্তু পরিণতমনস্ক তপন সেটা মেনে নেয়নি। বরং সে সংকল্প নেয় যে, আর কোনোদিন সে অন্যকে নিজের গল্প ছাপানোর দায়িত্ব দেবে না। এই সংকল্প তপনের চরিত্রে একটি অন্য মাত্রা যোগ করে। আসলে লেখক ছোটো মেসোর নির্বিচার সংশোধন কিশোরের লেখক মনে সংঘর্ষের জন্ম দেয়। লেখক হিসেবে সে আহত ও অপমানিত মনে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মৌলিকতার অনুভূতি হৃদয়ে টের পায়। তপন ছোটো, তপন হয়তো লেখক হিসেবেও তুচ্ছ কিন্তু সে তার মতো, এজন্য অন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। জ্ঞানচক্ষুর এই উন্মীলনেই তপন চরিত্রের সার্থকতা।
৪.২ "পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে"-'অলৌকিক' বিষয়টি কী? কোন ঘটনাটিকে উপলক্ষ করে কার মনে এই অলৌকিকভাবে বিষয়টি পরিস্ফুট হয়? এক্ষেত্রে বজ্রার আশাবাদ কীভাবে ধরা পড়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: 'অলৌকিক' শব্দটির আভিধানিক অর্থ 'যা লৌকিক নয়' অর্থাৎ যা অবাস্তব বা অকল্পনীয়। যা সাধারণ জীবনযাত্রা বা ঘটনাবলি থেকে পৃথক ধরনের, যেটা হয়তো বা মানুষের সাধ্য নয়, তাকেই 'অলৌকিক' বলা হয়ে থাকে। আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কিশোর প্রতিভা তপনের প্রথম গল্প 'প্রথম দিন' ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয় 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায়-এই ঘটনাকেই তপনের কাছে অলৌকিক মনে হয়।আলোচ্য 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পে একেবারেই 'আনকোরা' লেখক তপনের নিজের লেখা জীবনের প্রথম গল্পটি তার ছোটো মেসোর দৌলতে যখন 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন তপন তার নিজের চোখ-কানকে বিশ্বাস করতে পারে না। একটা মায়াবী দোলাচলতার জগতে সে হারিয়ে যায়। যুক্তিগ্রাহ্য দৃষ্টিকোণ থেকে এই ব্যাপারটিকে বিশ্লেষণ করে উঠতে পারে না। মনের এই দোদুল্যমান অবস্থাতেই কিশোর তপনের মনে অলৌকিকতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে আসে।
আশাপূর্ণা দেবীর 'জ্ঞানচক্ষু' গল্পটি পরিপূর্ণভাবে এক কিশোরের মনে জেগে ওঠা আশাবাদ এবং তা ভেঙে যাওয়ার কাহিনি। এই গল্পে তপনের সদ্য বিবাহিত বিশিষ্ট লেখক ছোটো মেসো তপনের লেখা পড়ে প্রশংসা করেন এবং তিনি জানান সামান্য 'কারেকশান' (সংশোধন) করে দিলে ওই গল্পটি 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত হতে পারে। এখান থেকেই শুরু হয় তপনের আশাবাদের প্রথম সিঁড়ি। এই সময় ছোটো মাসির জোরালো দাবিতে রাজি হয়ে ছোটো মেসো প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি তপনের গল্পটি পত্রিকায় প্রকাশ করে দেবেন। এই কথা শুনে তপন পুলকিত হয়ে আশাবাদের সমুদ্রে ডুব দেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও ছাপার অক্ষরে যখন সে তার গল্পটিকে দেখতে পায় না তখন সে মুষড়ে পড়ে। কিন্তু চিত্তের এই বিষণ্ণ দশাতেই আশাবাদের উত্তরণ ঘটে। তপনের ছোটো মেসো তপনের সেই গল্পটি 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে ছাপিয়ে এনেছেন। কিন্তু এই মুদ্রণের পিছনে প্রকৃত ঘটনা তখনও না জানলেও স্বপ্নপূরণের আনন্দঘন আকাশে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় তপন। এভাবেই আশাবাদ ঝিলিক দেয় তপনের জীবনে। এই ঘটনা এতটাই অবিশ্বাস্য যে, তপনের মনে হয়েছিল তার জীবনে কোনো এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে।