অসুখী একজন - মাধ্যমিক বাংলা কবিতা

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:

1. 'একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।' এই ব্যঞ্জনাটি কীভাবে কবিতায় উপস্থাপিত হয়েছে?
উত্তর: একটা কুকুর বা এক গির্জার নান-এর হেঁটে যাওয়ার তথা উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে যাওয়ার ব্যঞ্জনা গড়ে তোলা হয়েছে।

2. 'অসুখী একজন' কবিতায় সমাজজীবনের টুকরো টুকরো প্রাত্যহিকতায় একে একে কী কেটে গেল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি বা কথক স্ববাসভূমি চ্যুত হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জীবন থেমে থাকেনি। প্রাত্যহিকতার শান্ত ও ক্লান্তিকর অনুষঙ্গো একে একে একটা সপ্তাহ কিংবা একটা বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল।

3. এক সপ্তাহ, এক বছরের কী কী ঘটনা ঘটল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি তাঁর স্বদেশ তথা ভাবকল্পনার কেন্দ্রভূমি ত্যাগ করে চলে গেলে, এক সপ্তাহ এক বছরে ক্রমে বৃষ্টিতে ধুয়ে গেল তাঁর পায়ের দাগ এবং ঘাস এসে ঢেকে দিল রাস্তা।

4. 'বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল..." বৃষ্টি এসে কী ধুয়ে দিল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় বৃষ্টি এসে পথে পড়ে থাকা কবি বা কথকের পায়ের দাগ ধুয়ে দিল।

5. 'ঘাস জন্মালো রাস্তায়'- ব্যানাটিতে কবির কী ধরা পড়ে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় রাস্তায় ঘাস জন্মানোর মধ্যে দিয়ে পথে চলাচলের মানুষ যে আর নেই, সেই ব্যঞ্জনাটিই ধরা পড়েছে কবির লেখনির মধ্য দিয়ে।

6. 'অসুখী একজন' কবিতায় আঘাতকারী বছরগুলি কার মাথার ওপর নেমে এল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় আঘাতকারী বছরগুলি নেমে এল 'তার' অর্থাৎ সেই অপেক্ষারতা প্রেয়সীর মাথার ওপর। এখানে 'প্রেয়সী' যেন প্রিয়জনের অর্থাৎ কবি বা কথকের অপেক্ষায় অপেক্ষামান মাতৃভূমির প্রতীক হয়ে ওঠে।

7. 'অসুখী একজন' কবিতায় বছরগুলি পাথরের মতো মাথার ওপর নেমে আসার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় প্রতীক্ষারতা রমণীটির দুঃসহ, দীর্ঘ অনিঃশ্বেষ অপেক্ষাকে মাথার ওপর ক্রমাগত নেমে আসা পাথরের গুরুভারের সঙ্গে তুলনা করে বছরগুলি অতিক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৪. 'তারপর যুদ্ধ এল....' যুদ্ধ কীসের মতো আসে?
উত্তর: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ আসে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো।

9. 'তারপর যুদ্ধ এল....' 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ আসাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধ আসাকে রক্তের এক পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

10. 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের ছবিটি কবিতায় কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: চিলিয়ান নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা-র 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের অনুষঙ্গ হিসেবে কবি যে পঙ্ক্তিটির উল্লেখ করেছেন তা হল- 'রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো' অর্থাৎ মৃত্যু ও ধ্বংসের রক্তাক্ত ভয়াবহতার ছবি।

11. যুদ্ধকে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে যে তুলনা করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: যুদ্ধ সবসময়েই ধ্বংসাত্মক রূপ নেয় সে আগুন নিয়ে খেলা করে। ভয়ঙ্কর সব আগ্নেয়াস্ত্র, আগ্নেয় পাহাড়ের লাভা উদ্গিরণের মতো তাদের নির্গত লাল আগুনে সবকিছু জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয় এ কারণেই যুদ্ধকে রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

12. 'সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না'। কোন্ মেয়েটির মৃত্যু হল না?
উত্তর: কবি কথিত 'সেই মেয়েটি' আসলে মাতৃকল্প দেশ। দেশে যুদ্ধ বাধলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বাড়ে। দেশীয় সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মরতে মরতে বেঁচে থাকে।

13. 'সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন'....কীভাবে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল?
উত্তর: চিলিয়ান নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় সেই ভয়াবহ যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক ছায়া সমস্ত সমতলে আগুনের লেলিহান শিখায় সবকিছুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিল।

14. "শান্ত হলুদ দেবতারা/যারা হাজার বছর ধরে..."-দেবতারা হাজার বছর ধরে কী করছিল বলে 'অসুখী একজন' কবিতায় উল্লেখ পাওয়া যায়?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল বলে কবি উল্লেখ করেন যে দেবত্বের নির্বিকার নিষ্ক্রিয়তার বার্তাবহ।

15. '........তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না'। কোন স্বপ্ন তাঁরা আর দেখতে পারলেন না বলে তুমি মনে করো?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় যুদ্ধের বীভৎসতায় ভেঙে পড়া 'প্রাণময়' দেবতারা শান্তি, মৈত্রী, অহিংসার স্বপ্ন আর দেখতে পেল না বলে আমার মনে হয়।

16. মন্দির থেকে দেবতাদের টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় কবির কাছে তাঁর দেশ মন্দির। সেখানে যখন যুদ্ধ বাধল, তখন দেবতাদের মতো পুজো আদায়কারী উচ্চশ্রেণির মানুষেরাও যুদ্ধের অভিঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে গেল, কেন না যুদ্ধ কাউকে ছাড়ে না।

17. 'অসুখী একজন' কবিতায় কবির স্বপ্ন বিজড়িত বাড়ির পরিবেশটি কেমন ছিল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় কবির স্মৃতি ও স্বপ্ন বিজড়িত বাড়িটিতে গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি ও প্রাচীন জলতরঙ্গের ছবি যেন এক সাবেকি ইমারতের স্নিগ্ধ পূর্ণতাকে ফুটিয়ে তোলে।

18. 'ডুবে ছিল ধ্যানে'- দেবতাদের ধ্যানমগ্নতার তাৎপর্য কী?
উত্তর: কবি 'দেবতা' যাদের বুঝিয়েছেন, তারা হল সমাজের ওপরতলার সুখী মানুষ। এদের ধ্যানমগ্নতার তাৎপর্য এই যে, এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারে ধ্যানমগ্ন, অন্য ব্যাপারে উদাসীন।

19. 'অসুখী একজন' কবিতায় দেবতারা কোথা থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়ল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানস্থ, স্বপ্নে বিভোর পাথুরে দেবতারা যুদ্ধের অভিঘাতে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়ল।

19. 'অসুখী একজন' কবিতায় দেবতারা কোথা থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়ল?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানস্থ, স্বপ্নে বিভোর পাথুরে দেবতারা যুদ্ধের অভিঘাতে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়ল।

20. বছরগুলো পার হওয়াকে কেন 'পাথরের মতো' বলা হয়েছে?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় বছরগুলো পার হওয়াকে 'পাথরের মতো' বলার অর্থ হল ক্রমান্বয়ে বছর অন্তর্হিত হয়ে যাওয়ার চাপ ও তার ভারের প্রাবল্যকে বোঝানো হয়েছে।

21. 'আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়'- কোন পরিস্থিতিতে মেয়েটি কথকের জন্য অপেক্ষা করেছে?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় মৃত্যুর ধ্বংসস্তূপ আর অবিশ্বাসের মধ্যেও কথকের প্রিয়তমা সেই মেয়েটি তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছে।

22. 'রক্তের একটা কালো দাগ'- বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: 'অসুখী একজন' কবিতায় রক্তের একটা কালো দাগ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, যুদ্ধের বীভৎসতায় যেন রক্তও তার স্বাভাবিক রূপ হারিয়েছে। আসলে বিপর্যস্ত ও বিধ্বংসের বিকৃত রূপ বোঝাতে বহু ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যু বোঝাতে, কবি এই ধরনের চিত্রকল্পের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

23. কে. কার জন্য অপেক্ষা করেছিল?
উত্তর: চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় কবিকথিত 'মেয়েটি' অর্থাৎ মাতৃকল্প দেশ, কবির দেশে ফেরার প্রত্যাশায় অপেক্ষা করেছিল।

1. '... ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ'-কে ধুয়ে দিল? কবি এ কথার মধ্যে দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় স্বয়ং কবির পায়ের দাগ ধুয়ে দিল বৃষ্টির জল। বৃহত্তর সমাজ ও পৃথিবীর দাবি কোনো-কোনো সময় মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। অগ্নিগর্ভ ভয়ানক বিপ্লবের পথকেই সে তার পথ বলে মনে করে। তাঁর স্মৃতি, চেনা পৃথিবী, প্রিজনেরা সব কিছুকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যায় চূড়ান্ত সংগ্রামের লক্ষ্যে। পৃথিবীতে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় মানুষটির স্মৃতি। এ প্রসঙ্গেই 'ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ' কথাটির অবতাড়না।

2. "নেমে এল তার মাথার ওপর" কী নেমে এল? কেন তা নেমে এল?
উত্তর: কবি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতার কবি তাঁর প্রিয় আবাসভূমি ত্যাগ করে চলে যাওয়ায় তাঁর ওপর অপস্রিয়মাণ বছরগুলি ভারি পাথরের মতো নেমে এল।কবি যখন দূরে অনেক দূরে, তখন ক্রমে তাঁর প্রিয় আবাসভূমিতে, চারপাশে অনেককিছুই বদলে যেতে শুরু করে। এরই একটি হল ক্রম অপশ্রিয়মাণ বছরগুলির মাথার ওপর পাথরের মতো ভার নিয়ে নেমে আসা। এ হল অবস্থার সমকালীন পরিবর্তন। দেশ তার প্রিয় সন্তানকে দূরে সরিয়ে রেখে সুখী নয় বলেই যেন, বছরগুলি ক্রমে ভারি পাথর হয়ে তাঁর মাথার ওপর নেমে আসে।

3. "শিশু আর বাড়িরা খুন হল।"-'শিশু' আর 'বাড়িরা' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কেন তারা খুন হল? ২+১
উত্তর: সভ্যতার ইতিহাসে সব কিছুই মানুষের চিন্তা-চেতনা কর্মোদ্যমেই সৃজিত। সেখানে নগর সভ্যতা যে অবয়ব তৈরি করে তাতে 'বাড়ি' হল প্রিয় বাসস্থান, যার মধ্যে মানুষের গৃহসুখের সদিচ্ছা প্রকাশময় হয়। আর 'শিশু' হল ভবিষ্যত স্বপ্নের কোরক। কবি তাই এই দুই পৃথক আবেগের কেন্দ্রকে, আধারকে যুদ্ধ দ্বারা ধ্বংস হতে দেখিয়েছেন। যুদ্ধ এসে সব কিছু ধ্বংস করে। মানুষের স্বপ্ন-সৃজন-প্রেরণা সব কিছুই যুদ্ধে খুন হয়। যেমন খুন হয় বসবাসের বাড়ি আর আত্মার আত্মীয় শিশুরা। যুদ্ধই তাদের খুন করে।

4. "তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না"। মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যুদ্ধ হলে সমাজের স্থিরতার অবসান ঘটে। যুদ্ধ হল রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো, যাতে শিশু মৃত্যু ঘটে, মানুষ নিরাশ্রয় হয়। সমতলে যেন আগুন ধরে যায়। এই অবস্থায় যে ঈশ্বরেরা হাজার বছর ধরে মন্দিরে ধ্যানমগ্ন ছিল তারাও ভেঙে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে। তাদের স্বপ্ন দেখা, বিশ্ববিধানকে নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদির শেষ হয়। এ আসলে ঈশ্বরের ভেঙে পড়া নয়, ঐশ্বরিকতার বা মানুষের ঈশ্বর বিশ্বাসের ভেঙে পড়া।

5. "সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।"-এই মৃত্যু না হওয়ার তাৎপর্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতায় কবিতার কথক বা কবির জন্য অপেক্ষারতা সেই মেয়েটির উল্লেখ পাই, যাকে কবি দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে স্বদেশ ছেড়ে দূর থেকে দূরতর কোনো স্থানে চলে যান। কিন্তু সেই অপেক্ষারতা জানত না যে এই মানুষটি আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না। এরপর জীবন নিজের ছন্দে চলল, ক্রমে সপ্তাহ-বছর অতিক্রান্ত হল। কবির পদচিহ্ন ধুয়ে গেল বৃষ্টিতে। কিন্তু সেই মেয়েটির অপেক্ষা যেন অন্তহীন। পাথরের মতো ভারি আর নিষ্ঠুর আঘাতকারী বছরগুলি নেমে এল তার মাথার ওপর। তারপর যুদ্ধ শুরু হল। রক্তে আর অস্ত্রের গর্জনে 'শিশু আর বাড়িরা' খুন হল। অর্থাৎ মানুষের অস্তিত্বের চিহ্ন, প্রাণের চিহ্ন নির্মূল হতে শুরু করল। ক্রমে ধ্বংসে আগুন নেমে পড়ল সমতলে। শান্ত হলুদ দেবতাদের মন্দির, কবির শৈশব-স্মৃতি বিজড়িত মিষ্টি বাড়িটিও ধ্বংস হল। অর্থাৎ, সমস্ত শহরটাই জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। এত ধ্বংসের মধ্যেও কিন্তু অপেক্ষারতা সেই মেয়েটির মৃত্যু হয় না। কারণ ভালোবাসার মৃত্যু হয় না-পার্থিব সবকিছুই ধ্বংসের আওতাহীন, নশ্বর। একমাত্র মানবীয় ভালোবাসাই অবিনশ্বর। সে সময় থেকে সময়ান্তরে বয়ে যায়, পথ চেয়ে প্রিয়জনের প্রতীক্ষায়।

6. "রক্তের একটা কালো দাগ"। রক্তের দাগ কালো কেন? পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কোন্ বীভৎসতার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে? ২+১
উত্তর: রক্ত ক্ষরণের সময় রক্ত থাকে সতেজ তাজা। তখন তার রং স্বাভাবিক রক্তাভ। কিন্তু এই দাগের ওপর দিয়ে যখন কালের প্রবাহ চলতে থাকে, তখন বাসি রক্তের দাগ হয়ে পড়ে কালো। প্রশ্নোদ্ভূত পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহ আত্মপ্রকাশের রক্তক্ষয়ী রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় যুদ্ধের। শুধু খুন করে, ধ্বংস করে এখানে এই খুন ও ধ্বংসের প্রতীক যেন ওই শুকনো রক্তের কালো দাগ। কবি সচেতনভাবেই মাটির বুকে অঙ্কিত কালো রক্ত চিহ্ন দেখিয়ে যুদ্ধের বীভৎসতার বিরোধিতা করেছেন।

7. "সেই মিষ্টি বাড়ি, সেই বারান্দা"- এই পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন-এর অন্তর্নিহিত কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত পঙ্ক্তিটিতে যে মিষ্টি বাড়ি ও বারান্দার উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি আসলে কবির সেই বিশিষ্ট স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ও বারান্দা; যার সঙ্গে কবির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, আবাল্য সান্নিধ্যে তিনি যেখানে বড়ো হয়ে উঠেছেন। যুদ্ধ এসে অনাবশ্যক হামলা করলে কবির সেই মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা আর পূর্বের অবস্থায় অবশিষ্ট রইল না। যুদ্ধ তাদের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খুন করে দেয়। ফলে বারান্দাটিও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। যেখানে এক সময় কবি ঝুলন্ত বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়েছিলেন। যুদ্ধের আগুন সেই সবুজ স্মৃতিটুকুও ধ্বংস হয়ে গেল।

৪. "প্রাচীন জলতরঙ্গ সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে" বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : প্রশ্নোদ্ভূত পঙক্তিটি পাবলো নেরুদা রচিত 'অসুখী একজন' কবিতা থেকে গৃহীত। আগ্নেয় পাহাড়ের মতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের লেলিহান আগুন, সমতলকেও গ্রাস করেছিল। কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত মিষ্টি বাড়িটিও যুদ্ধের নির্মম অভিঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছিল। সেই বাড়ির বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি ও প্রিয় প্রাচীন জলতরঙ্গ সবই ভেঙে গেল, সম্পূর্ণ ভস্ম হল যুদ্ধের আগুনে। অর্থাৎ কবির আশ্রয় অস্তিত্বের একমাত্র প্রতীক চিহ্নটিও যুদ্ধের নিষ্ঠুর ধ্বংসলীলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।

1. অসুখী একজন কবিতায় কাকে অসুখী বলা হয়েছে? সে কেন অসুখী? কবিতা অবলম্বনে তা বুঝিয়ে দাও। অথবা, অসুখী একজন কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর: অসুখী একজন সাম্যবাদী ভাবধারার কবি পাবলো নেরুদা তার অসুখী একজন কবিতায় আক্ষরিক ভাবে দুজন অসুখী মানুষের ছবি রয়েছে। এজন কবিতার কথক এবং অন্যজন বস্তার ফেলে আসা প্রিয়জন। সেই প্রিয়জনের সুখহীনতার কথা বস্তা সমগ্র কবিতা জুড়ে তুলে ধরেছেন। অসুখী হওয়ার কারণ: অসুখী একজন কবিতায় কবি দেখিয়েছেন যুদ্ধ মানুষকে অসুখী করে। কবি বস্তা রূপে একজনকে চিহ্নিত করে তার জবানীতে এক পারিবারিক তথা সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক জীবনের চালচিত্র অঙ্কন করেছেন। বস্তা যুদ্ধের প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। আর তার প্রিয়জন মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে যায়। মেয়েটি তার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে গেলেও সে আর ফিরে আসে না। যুদ্ধে সমতলে আগুন ধরে। কবির মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, করতলের মতো পাতা, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সবকিছু যুদ্ধের আগুনে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে থাকে কাঠকয়লা। দোমড়ানো লোহা। পাথরের মূর্তির বিভৎস মাথা, রক্তের কালো দাগ। মানুষের জীবনের আশা ভরসার দেবতারা ভেঙে যায়। টুকরো টুকরো হয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। মূল্যায়ন: এরূপ প্রেক্ষাপটে একাকী দাঁড়িয়ে অসুখী মেয়েটি শুধু জীবন ধারণের কষ্ট নিয়ে অপেক্ষমান। তার পরিচিত ব্যক্তির আগমন। প্রত্যাশা তাকে অধীর করে তুলছে। অন্তরকে বিদীর্ণ করে তুলেছে। তাই বলা যায় কবিতাটি যুদ্ধ বিরোধী তথা মানবতাবাদী কবিতা।

2. 'সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না'-মেয়েটি কে, কোন প্রসঙ্গে এই বক্তব্য? বক্তব্যটির তাৎপর্য লেখ।
উত্তর: প্রিয়তমা মেয়েটি চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত অসুখী একজন কবিতায় মেয়েটি হল কবির প্রিয়তমা। অর্থাৎ কবিতার কথক ও সৈনিকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে। প্রসঙ্গ: দরজার সামনে অনন্ত প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়তমা। কবি তাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে চলে এসেছিলেন। অনেক সময় অতিক্রান্ত হলেও কবিতার কথক ফিরতে পারেননি। যুদ্ধের ভয়াবহ আগুনে সবকিছু ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি তবুও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই প্রসঙ্গ আলোচ্য অংশটির অবতারণা। তাৎপর্য: কবির প্রিয়তমা কখনোই অনুমান করতে পারেননি যে, কবি কখনো আর ফিরে আসবে না। সময়ের ধারায় একের পর এক বছর কেটে যায়। বৃষ্টির ধারা কবির পথচলা পায়ের চিহ্ন মুছে দেয়। ঘাম জন্ম নেয় পথের বুকে একের পর এক পাথরের মতো বছরগুলো চেপে বসে মেয়েটির বুকে। মাথার ওপর অসহ্য যন্ত্রণা নেমে আসে। যুদ্ধ শুরু হলে চারিদিকের সময়ে পরিবেশ যুদ্ধের আগুনে ধ্বংস হয়। শিশু আর বাড়িরা মৃত্যুবরণ করে। তবুও সেই মৃত্যুপুরীর মধ্যে প্রিয়তমা মেয়েটি অনন্ত প্রতীক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকেন। সমস্ত ভাঙনের মধ্যে সে যেন একমাত্র জীবনের প্রতীক। যুদ্ধের বিধ্বংশি আগুনের মন্দিরের দেবতা পর্যন্ত মন্দির থেকে বাইরে বেরিয়ে এল। কবির স্বপ্নের বাসভূমি চূর্ণ হয়ে গেল। তবুও সেই মেয়েটি অনন্ত প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল।

3. 'তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না'- এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? কোন প্রসঙ্গে এই বক্তব্য? স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ কী?
উত্তর: দেবতাদের কথা চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার অসুখী একজন কবিতায় দেবতাদের কথা বলা হয়েছে। প্রসঙ্গ: যুদ্ধের সময় চারদিকে মৃত মানুষের শব জমে উঠেছিল। যে দেবতারা মানুষকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করে, মানুষের অনন্ত কল্যাণ করবেন, তারাও মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি। স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্নদামঙ্গলের কবি ভারতচন্দ্র লিখেছিলেন-'নগর পুড়লে দেবালয় কী এড়ায়?' এই তির্যক বক্তব্যের কারণ সঙ্গত। যখন চারিদিকে ধ্বংসের কোলাহল শোনা যায় তখন দেবতারা যেন মানুষের মতো অসহায় হয়ে পড়েন। যুদ্ধের আগমনে চারিদিকে শোনা যায় ভয়ংকর শব্দ দানবের রণ উন্মত্ততা। বাতাসে যখন বারুদের গন্ধ ঘরবাড়ি সবকিছু ভেঙে যায়। সারা অঞ্চল জুড়ে চলে আগুনের হোলি খেলা। ঈশ্বরের ধ্যানমগ্ন মূর্তিগুলি ছিন্নভিন্ন হয়। মন্দির থেকে তারা উল্টে পড়েন। টুকরো টুকরো হয়ে যায় দেবতাদের প্রতিকৃতি। কবির মনে হয়েছে এই দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। তারা যেন অসহায় মানুষের মতো বিপন্নতার শিকার হল। তারা আর মুক্তির পথ দেখাতে পারবে না। আশার আলো তাদের জীবন থেকে দূরে চলে গেল কারণ তারা নিজেরাই অসহায়।

Post a Comment