Posts

নদীর বিদ্রোহ গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

1. "চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল"- কেন নদের চাঁদের কাছে নদীর মূর্তি অপরিচিত হল? উত্তর: নদীর অপরিচিত মূর্তি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে বাঁধে বন্দি হওয়া নদীটির কথা বলা হয়েছে। নদের চাঁদ স্টেশনমাস্টারি করতে এসে এই নদীকে দেখেছিল। এই নদী গভীর প্রশস্ত জলপূর্ণ প্রথম বর্ষার কারণে পাঁচদিন সে নদীকে দেখতে পায়নি। পাঁচদিন পরে গিয়ে নদের চাঁদ দেখল নদী যেন তার বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিদ্রোহ করছে। নদীর গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলে ফেঁপে ছুটে চলেছে। নদীর এই ভয়ঙ্কর রূপ নদের চাঁদ আগে কখনো দেখেনি। তাই তাকে অপরিচিত মনে হয়েছে। 2. "নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে"- কে কীভাবে নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল? উত্তর: নদের চাঁদে অনুভব: পাঁচদিন টানা বৃষ্টির পর নদীর কাছে গিয়ে নদের চাঁদ দেখল নদীর পঙ্কিল জলস্রোত ফুলে ফেঁপে উদ্যম গতিতে ছুটে চলেছে। নদী যেন উন্মত্ত। নদীর জলস্রোত ব্রিজ ও বাঁধের কাছাকাছি এসেছে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে দিতে চায় সব বাধাকে। নদের চাঁদের মনে হল নদী যেন মুক্তি পেতে চাইছে, ফিরে পেতে চাইছে তার স্বাভাবিক গতি। তাই তার এই ভয়াল বিদ্রোহ। 3. "নদীর ধারে তার জন্ম হইয়াছে" কার কথা বলা হয়েছে? একথা বলার কারণ কী? উত্তর: নদের চাঁদ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে নদের চাঁদের কথা বলা হয়েছে। একথা বলা কারণ নদী কেন্দ্রিক জীবনে যারা অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক বারোমাস। নদের চাঁদ নদীকে না দেখে থাকতে পারে না। সে নিজেও তা বোঝে, তবু নিজেকে সংযত করতে পারে না। নদীর প্রতি তার ভালোবাসার কারণ আছে। নদীর ধারে তার জন্ম হয়েছে। নদীর ধারেই সে শৈশব, বাল্য, কৈশোর কাটিয়েছে। তাই নদীর প্রতি ভালোবাসা তার অদম্য। 4. "আজ তার মনে হইল কী প্রয়োজন ছিল ব্রিজের"-বক্তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী? উত্তর: মনে হওয়ার কারণ প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হলে প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নেয়। মানুষে নিজের স্বার্থের কথা ভেবে প্রকৃতির স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে। 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়ে যায় একের পর এক সেতু প্রতিষ্ঠার কারণে। মনে হয় হয়ত একদিন গভীর এই জলপূর্ণ নদী ক্ষীণ নদীতে রূপান্তরিত হবে। সেই প্রসঙ্গে যে সেতুর জন্য এতকাল নদের চাঁদের গর্ব হত, সেই সেতু যে নদীর ক্ষতি করেছে এ বিষেয়ে সন্দেহ নেই। 5. নদেরচাঁদ নদীর সঙ্গে যে খেলায় মেতে উঠেছিল সেই খেলাটি কেমন ছিল? উত্তর: নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের খেলা এক বর্ষার দিনে নদীর কাছে গিয়ে নদেরচাঁদ দেখল নদীর জল সেতুর ধারে স্তম্ভে বাধা পেয়ে এক ফেনিল আবর্ত রচনা করেছে। সে পকেট থেকে অনেকদিন আগের পত্নীকে লেখা একটা চিঠি বার করে নদীর স্রোতে ছুঁড়ে ফেলল। চোখের পলকে সেই চিঠি অদৃশ্য হয়ে গেল। চিঠির এক একটি পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে মুচড়ে সে নদীর মধ্যে ফেলতে লাগল। এইভাবে নদের চাঁদ এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল। 6. "জলপ্রবাহকে আজ তার জীবন্ত মনে হইতেছিল" অংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। উত্তর: তাৎপর্য: 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে আমরা দেখি পাঁচদিনের বৃষ্টির পর নদেরচাঁদ তার চিরচেনা নদীটিকে চিনতে পারেনি। শীর্ণকায়া জলস্রোতের পরিবর্তে তরঙ্গায়িত জলপ্রবাহ যেন দিগন্তের দিকে ছুটে চলেছিল। নদীবক্ষের ওপর বসে থাকা নদেরচাঁদকে স্পর্শ করার জন্য নদীর জল যেন পাল্লা দিয়ে ফুলে ফেঁপে উঁচু হয়ে উঠেছিল। আনন্দিত নদেরচাঁদ চিঠির পাতা ফেলে নদীর সঙ্গে খেলা শুরু করলেও নদীও যেন তার বিস্তারের মধ্যে সেই চিঠি লুকিয়ে ফেলে তার খেলার সঙ্গ দিচ্ছিল তাই নদীর জলপ্রবাহকে নদের চাঁদের জীবন্ত মনে হচ্ছিল। 7. "চিঠি পকেটেই ছিল"- কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে? সেই চিঠির কী পরিণতি হয়েছিল? উত্তর: নদেরচাঁদের বিরহপূর্ণ চিঠি: নদের চাঁদ গ্রাম থেকে বহু দূরে কর্মক্ষেত্রে বাস করত গৃহে বসবাসরত পত্নীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ সবসময় হত না। তাই চিঠিই ছিল একমাত্র ভরসা। বিশেষত বর্ষা ঋতুর আবেগপূর্ণ আবহাওয়া নদেরচাঁদকে বিরহে উতলা করে তুলেছিল। তাই পাঁচদিনের বর্ষণের সুরে সুর মিলিয়ে সে একটি বিরহপূর্ণ চিঠি লিখেছিল। এখানে সেই চিঠির কথা বলা হয়েছে। নদের চাঁদ আবেগপ্রবণ চিঠিতে লিখেছিল, ভয়ংকরী নদীর সঙ্গে খেলা করার তাগিদে সেই চিঠি ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।

Post a Comment